নিত্যপণ্যের দাম কমছে না, বাড়ছে জনদুর্ভোগ

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ গত জুন পর্যন্ত আগের এক বছরে ১৪ লাখ টন চাল আমদানি করেছে। সরকারিভাবে আট লাখ টন, বেসরকারিভাবে ছয় লাখ টন চাল আনা হয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে দাম কমছে না। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত মে মাসের শেষ দিকে শুধু ঢাকার বাজারে মোটা চালের দাম ছিল ৫২-৫৫ টাকা কেজি, যা এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
২০২০ সালের পর থেকেই দেশের বাজারে চালের দাম চড়া। ওই বছরের শুরুতে মোটা চালের কেজি ছিল ৩০-৩৫ টাকা (টিসিবির হিসাব)। করোনাকালের শুরুতে (২০২০ সালের মার্চ) আতঙ্কের কেনাকাটায় চালের দাম বেড়ে যায়।

চাল বাংলাদেশকে সব সময় আমদানি করতে হয় না। ভোজ্যতেল, চিনি, জ্বালানি তেল, রান্নায় ব্যবহৃত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসসহ (এলপিজি) বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতে হয়। ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন, জ্বালানি খাতে সৌদি আরবের কোম্পানি আরামকো ও বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগের পর্যায়ে নেমে গেছে। বাংলাদেশেও দাম কমেছে। তবে বিশ্ববাজারের তুলনায় কম হারে। বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটাই কমে গেছে। এমনকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দর এখন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগের চেয়েও কম। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মূল্যস্ফীতিও অনেকটা কমিয়ে এনেছে। কিন্তু বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনো চড়া। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালে দেউলিয়া হওয়া শ্রীলঙ্কায় এখন মূল্যস্ফীতি, অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে না, বরং কমছে। মূল্য সংকোচনের হার শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। একটি জাতীয় দৈনিকে বলা হয়েছে, চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়া পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালে ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। সেটা এখন নেমেছে ৪ শতাংশের কাছাকাছি।
ভারতে মূল্যস্ফীতি এখন একেবারেই কম (১ দশমিক ৫৫ শতাংশ)। বিপরীতে বাংলাদেশে এখনো মূল্যস্ফীতি চড়া, যা গত জুলাই মাসে ছিল সাড়ে ৮ শতাংশের বেশি।
বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কতটা কমেছে, তা জানা যায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) একটি প্রতিবেদন থেকে। ট্যারিফ কমিশন নিয়মিত এই প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারকে দেয়। গত ১৮ আগস্টের প্রতিবেদনে দেখা যায়, থাইল্যান্ডে এখন ৫ শতাংশ ভাঙা চালের মেট্রিক টনপ্রতি দর ৩৮১ মার্কিন ডলার (এফওবি মূল্য, অর্থাৎ জাহাজভাড়া ছাড়া), যা এক বছর আগে ছিল ৬১৬ ডলার। এক বছরে দাম কমেছে ৩৮ শতাংশ।
অর্থাৎ দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে ব্যবসায়ীরা মুখিয়ে থাকেন তারা যৌক্তিক দাম কমানোর ক্ষেত্রে চরমভাবে উদাসীন। এসব দেখার কথা ট্যারিফ কমিশন বা সরকারের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সরকার এ বিষয়ে আশানুরূপ তৎপর নয়। কিন্তু নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তা দেখার অবসর হবে কি?