নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘বাঁশখালী মইশখালী/পাল উড়াইয়া দিলে সাম্পান গুয় গুড়াই টানে/তোরা হন হন যাবি আঁর সাম্পানে,’ ওরে কর্ণফুলী রে..স্বাক্ষী রাখিলাম তোরে’ সহ অনেক গান এসব কালজয়ী জনপ্রিয় গানের শিল্পী, আঞ্চলিক গানের মুকুটহীন সম্রাট সনজিত আচার্য্য না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
আজ (সোমবার) সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে নগরীর বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৭১ বছর।
সনজিত আচার্য্য-র বোন গীতা আচার্য্য জানান, দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি।
আজ (সোমবার) সকালে অসুস্থবোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাঁর আর ফেরা হলো না।
নগরীর বলুয়ারদিঘী মহাশশ্মানে আজ রাতে তাঁর অন্তিমকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
তিনি স্ত্রী স্বপ্না আচার্য্য এবং তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সনজিত আচার্য্য একাধারে গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, সংগীতশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। তার জীবদ্দশায় তিনি প্রায় সহ¯্রাধিক গান লিখেছেন। তাঁর অনেক গান জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে।
১৯৫৩ সালের ২৫ জুন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার চাপড়া গ্রামে কীর্তনীয়া মনোরঞ্জন আচার্য্যর ঘরে তাঁর জন্ম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ সনজিত আচার্য্য পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতেন নগরীর পাথরঘাটা ইকবাল রোডে নিজ বাসায়।
চট্টগ্রমের আঞ্চলিক গানে শেফালী ঘোষ ও শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের কালজয়ী জুটির পর সনজিত আচার্য্য-কল্যাণী ঘোষ জুটিই হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি।
১৯৭৮ সালে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা শিল্পী সনজিত আচার্য্য ও কল্যাণী ঘোষের ‘গুরা গুরা হতা হই/ বাগানর আড়ালত বই/ পিরিতির দেবাইল্যা আঁরারে বানাইলা’ ও ‘সত্যি গরি কঅনা কক্সবাজার লাই যাইবা’ গানটিসহ চারটি গান নিয়ে তাদের প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড বের করে। সত্তরের দশকের শেষের দিকে সনজিতের আঞ্চলিক নাটক ‘সাম্পানওয়ালা’ নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলেন প্রয়াত সংগীত কিংবদন্তী সত্য সাহা, যে ছবি পুরো দেশে আলোড়ন তোলে।
সনজিত-শেফালী, সনজিত-কল্যাণী এবং সনজিত-কান্তা নন্দীর দ্বৈতকণ্ঠে গাওয়া ‘বাজান গিয়ে দইনর বিলত/পাটি বিছাই দিয়্যি বইও ঘরত’, বাঁশ ডুয়ার আড়ালত থাই/ আঁরে ডাকর কিয়রলাই’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।