নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলমের দায়িত্বকালে বারইপাড়া খালের প্রকল্প দেওয়া হয়। তারা সেই প্রকল্পটি ঠিকভাবে করতে পারেনি। এটার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এসে ওই প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) বদলে দেন। সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার জন্য সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি সিডিএ’র করার কথা নয়। সিটি করপোরেশন না পারায় এটি সিডিএকে দিয়েছে সরকার।
গতকাল বুধবার দুুপুরে সিডিএ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
নগরে জলাবদ্ধতা হলেই সবাই আঙ্গুল তুলে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প পরিচালন সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দিকে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে সংস্থার সংবাদ সম্মেলনে নালা-ড্রেন পরিষ্কার না করার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দিকেই আঙ্গুল তুলেন তিনি।
তিনি বলেন, সিডিএ যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেটির নাম হলো- চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন। এ নাম দেওয়ার কারণে সবাই মনে করে, পুরো চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ সিডিএর। আসলে চট্টগ্রামের ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি খালের কাজ এ প্রকল্পে। বাকি খালগুলোসহ নালাগুলোতে কি আমরা কাজ করবো।’
স্থানীয় একটি পত্রিকার প্রতিবেদন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনটি হচ্ছে- খালে পানি নেই, তবু ডুবে আছে সড়ক’। প্রতিবেদনটিতে চশমা খালের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। আমরা আমাদের কাজগুলো ঠিকভাবে করছি। ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করলে, আর মানুষ যদি ড্রেনে লেপ, তোষকসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা ফেলে তাহলে ড্রেনের পানি খালে কিভাবে আসবে। এর দায় কি আমাদের? এছাড়া আমাদের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড। যারা বলছেন এ প্রকল্পের কাজ হয়নি আমি মনে করি তাদেরকে অপমান করার জন্য এটা বলা হচ্ছে।’
জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘আমরা টানা বৃষ্টিতেও স্ট্রাইকিং ফোর্স রেডি রেখেছি। যেখানে পানি জমছে, সেখানে তারা যেন দ্রুত খাল পরিষ্কার করে দেয়। কিন্তু যেখানে মানুষের স্থাপনা আছে, সেখানে গিয়ে মাটি সরানো সম্ভব নয়। এতে স্থাপনার ক্ষতি হতে পারে। আমরা কোনো স্থাপনার যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য খালের পাড়ে আগে রিটার্নিং ওয়াল করে তারপর আমরা মাটি সরানোর কাজ করছি।’
প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে আমি জানি না। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হলে ভূমি অধিগ্রহণের কিছু কাজ আছে, জটিলতাও আছে। সেগুলো সিডিএ আমাদের যখন বুঝিয়ে দেবে তখন আমরা কাজ করতে পারি। বর্তমানে আমাদের ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে ৫টি রেগুলেটর আমরা বসিয়েছি এবং ২৫টি খালের কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ করেছি। এছাড়া ১১টি খালের কাজ অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে।’
প্রকল্প শেষে কতটুকু সুফল পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে মোট ৫৭টি খাল আছে। আমরা কাজ করছি ৩৬টি খালের। বাকি খালগুলোর কি অবস্থা আমরা বলতে পারবো না। তাই পুরোপুরি সুফল পেতে আমাদের সবগুলো খালের কাজ দিতে হবে। তবে নগরে জলাবদ্ধতা কমাতে হলে খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া নগরের ছোট-বড় প্রায় ১৬শ নালা রয়েছে। এসব নালা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংস্থারটির বোর্ড সদস্য আশিক ইমরানসহ অন্যান্য বোর্ড সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।