অগ্রাধিকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও নগর ডেল্টা প্ল্যানে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের উন্নত ও নান্দনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে ৩৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। একইসাথে জলাবদ্ধতা নিরসনে মহাপরিকল্পনা এবং নগর উন্নয়নে ডেল্টা প্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সব ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে সেগুলো উত্তরণে ১০০ দিনের সময় চেয়েছেন।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কক্ষে মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী এ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ।
৩৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসনকে। একইসাথে যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নালা-নর্দমা ও খাল-নদী থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট গড়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তৈরি করা, বৃহত্তর চট্টগ্রামের নৈসর্গিক শোভা কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামকে পর্যটন রাজধানী করা, সিটি করপোরেশনের কর বিভাগে সর্বোচ্চ নজরদারি ও দক্ষতা ফিরিয়ে এনে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ, চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সকল সেবা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় জোরদার, বন্ধ হয়ে যাওয়া নাগরিক পরিসেবা কার্যক্রম চালু করা, ব্লু ইকোনমির সুবিধা নিশ্চিত করা, পাহাড় রক্ষা করে উপকূলে সবুজ বেস্টনি গড়ে তোলা, কর্ণফুলী ও হালদা দখল-দূষণমুক্ত করে যাত্রীবাহী লঞ্চ-স্টিমার সেবা চালু করা, মশকমুক্ত নগর গড়তে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, নগরীতে পাবলিক টয়লেট স্থাপন, সব সড়ক ও অলিতে-গলিতে এলইডি সড়ক বাতি এবং সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা, শিক্ষার মানসম্মত বিকাশে মনোযোগ দেয়া, প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলার মাধ্যমে সেবার মান উন্নত করা, কারিগরি ও আত্নকর্মসংস্থান উপযোগী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইন্টারনেট শিক্ষাকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেয়া, যত্রতত্র পার্কিং ও ফুটপাত দখল নিয়ন্ত্রণ করে রাত ১০টার পর মাইক ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া, পাহাড় কাটা ও জলাশয় ভরাট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে কাজ করাসহ প্রতি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে সমন্বয়ক করে প্রতিমাসে একটি করে অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠক করার পরিকল্পনার কথা জানান রেজাউল করিম চৌধুরী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এই নির্বাচনী ইশতেহারে অনেক কিছুই আনা সম্ভব হয়নি। তবে চট্টগ্রামকে একটি নান্দনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে। এক্ষেত্রে সকলের পরামর্শ নিয়েই টেকসই কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।
হোল্ডিং ট্যাক্স প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পূর্ববর্তী সময়ে কি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা আমার জানার প্রয়োজন নেই। কারণ প্রত্যেকের কাজের স্টাইল ভিন্ন। হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের কথা কোথাও বলা হয়নি। তবে তা কিভাবে সকলের উপযোগী করা যায় তা নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
কাজীর দেউরিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রসঙ্গে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় অনেক কিছুই করা হবে। চট্টগ্রামেই প্রথম ছয় দফা ঘোষণা হয়েছিল সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।
এ সময় সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কাজীর দেউড়ি শিশুপার্কের জায়গাটির মালিক সেনাবাহিনী। আর এই জায়গাটি পার্ক ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না বলে লিখিত আদেশ রয়েছে।
নগরবাসীর কাছে ভোট প্রার্থনা করে নির্বাচনী ইশতেহারে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শেষ কথা হচ্ছে, অঙ্গীকারের স্বপ্নের কাচ্চি বিরিয়ানি নয়, নগরীর বিপুল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সকলের সহযোগিতা পেলে যোগ্যতার পরীক্ষায় জিতব বলে আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী। আমার কিছু পাওয়ার নেই, পারিবারিকভাবে সব পার্থিব অর্জন আমার আছে। সুযোগ পেলে নিজের মেধা-মনন, কর্ম সবকিছু নগরবাসীর জন্য উৎসর্গ করাই আমার অঙ্গীকার।