নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরীর কোতোয়ালীর নন্দনকানন ৩ নম্বর গলির জে কে ভবনের সামনে একটি ৪ তলা ভবন ভাঙতে গিয়ে ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে কোন ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে নন্দনকানন ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। তবে ভবনটি ভাঙতে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস, বিটিসিএল ও ডিস সংযোগ বন্ধ করতে তাদের জানানো হয়নি- বলেন কর্মকর্তারা। জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার নাগাদ এ ঘটনা ঘটে।
ভবনটির বর্তমান মালিকের পরিচয় জানতে চাইলে স্থানীয়রা বলেন, ‘বর্তমান ভবনটির মালিক সম্পর্কে আমরা জানি না। তবে আগের মালিক ছিলেন কেসিদে রোডের মুকুল স্টুডিও’র স্বত্বাধিকারী অরুণ বাবু। ভবনটি মাস তিনেক আগে স্থানীয় কোন এক ডেভেলপরাকে দেয়া হয়েছে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘ধসে পড়া ভবনটির পাশে আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। ওই ভবনে দেখা যায় ‘সাকসেস টিউটোরিয়াল’ নামক একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। যেখানে পাঠদান চলমান রয়েছে।’
ঝুঁকিপূর্ণ এমন ভবনে কেন পাঠদান করানো হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোচিংয়ের শিক্ষক মো. ইমরান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এই ভবনটিও ডেভেলপারকে দিয়েছে। শীঘ্রই ভেঙে ফেলবে। আমরা আগামী মাসে এখান থেকে অন্যত্র চলে যাবো।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে, নন্দনকানন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা বেলা ২টা ৫০ মিনিট নাগাদ এক গণমাধ্যম কর্মী সূত্রে বিষয়টি জানতে পারি। আমাদেরকে ভবনের মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয়নি। ঘটনাস্থলে এসে দীর্ঘক্ষণ ছিলাম। স্থানীয়দের সূত্রে জানতে পারি ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে ভবনটি ভাঙার কাজ চলছে। এতে কোন ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটি ধসে পড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই ভবনের প্রধান রাজমিস্ত্রি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘এখানে কোন ধরনের ঘটনা ঘটেনি। গত ২০ দিন ধরে ভবনটি ভাঙার কাজ চলছে। পাশে রাস্তা থাকাতেই ইট বা কংক্রিট যেন রাস্তায় পথচারীদের সমস্যা না হয় তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছিলাম। দেয়াল ভাঙতে গিয়ে অনাকাক্সিক্ষতভাবে রাস্তায় ধসে পড়েছে। আমরা পরিষ্কার করে দিচ্ছি।’
ভবনটি ধসার আগে টেলিফোন ও বিদ্যুৎ লাইন বন্ধের কোন ধরনের নোটিশ করানো হয়েছিল কি’না এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ওই সময়ে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধের আবেদন মৌখিকভাবে করা হয়েছিল এবং বিদ্যুৎ লাইনটি বন্ধ ছিল।’
কিন্তু বিদ্যুৎ লাইন ও টেলিফোন লাইন বন্ধ ছিল না- বলেন পার্শ্ববর্তী কোচিং সেন্টারের কর্তৃপক্ষ। কোচিং কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘ভবনটি ধসে পড়লে হালকা শব্দ হয়েছিল। তবে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ ছিল না। ধসে পড়ার পর বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ হয়েছে।’
স্থানীয় ডিস কানেকশন কর্মকর্তারা বলেন, ‘ভবনটি ভাঙার আগে আগাম কোন সর্তক সংকেত আমাদের জানানো হয়নি।’
এনায়েত বাজার ওর্য়াড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ বলেন, ‘বিশ দিন ধরে এক ডেভেলপার কোম্পানি চার তলা ভবনটি ভাঙার কাজ করে। কিন্তু তাদের আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল। এ ঘটনায় কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’
বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য সংযোগ বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের প্রয়োজন ছিল এমন রাস্তার পাশে ভবন ভাঙার আগে ফায়ার সার্ভিস, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগকে জানিয়ে রাখা। কিন্তু তারা তা করেনি। ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যেতো।’
নন্দনকানন বিটিসিএল এর উপ মহা ব্যবস্থাপক তাবাসসুম ইসলামকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র নির্বাহী প্রকৌশলী (স্টেডিয়াম অফিস) কার্যালয় বলা হয়, ‘আমরা ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমাদেরকে ভবন মালিক পক্ষ থেকে কোন কিছু জানানো হয়নি। শুধু নন্দনকানন না, কাজীর দেউড়ি থেকে শুরু করে তার আশপাশে কোন এলাকাতে রাস্তার পাশে যতটুকু পিআরএস থাকা দরকার ততটুকু নেই। সবাই পারলে রাস্তা দখল করে ভবন নির্মাণ করছে। আমাদের লাইন করার কোন রাস্তা নেই। আমাদের একস্থানে তিন চারটি ট্রান্সফরমার রাখতে হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইন ব্যবস্থা বাড়ানোর কোন জায়গা তারা রাখেনি।’