বছরের প্রথম দিনেই নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়েছে শিশুÑকিশোর কিশোরীরা। করোনার জন্য এবারের বই উৎসব ঘটা করে পালিত না হলেও আনন্দের ঘাটতি হবে না তাদের; স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বই বিতরণ তবুও অনেকদিন পর সহপাঠীদের পেয়ে সুখÑদুঃখ আনন্দÑউচ্ছ্বাসের ঝাঁপি খুলে দেয়া কি বন্ধ হবে! শৈশব কৈশোরের নির্দোষ মনের অভিব্যক্তি ফুটে উঠবে সাথীদের পেয়ে, সেই সাথে আগামী বছরের স্বপ্ন সাধ মুকুলিত হবে কিশোর মানসে।
বিগত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বরে বই বিতরণ উৎসবের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক স্তরের বই বিতরণ শুরু হবে স্কুলে স্কুলে, প্রাথমিকের শতভাগ বই পৌঁছে গেছে ইতিমধ্যে। মাধ্যমিকের বই বিতরণও শুরু হবে কয়েকদিন পরে পর্যায়ক্রমে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঠন পাঠনে অনলাইন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি শিশুÑকিশোরদের মানসিক বিকাশে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি শরীরচর্চা, খেলাধুলা ও অন্যান্য বই পড়া এবং সাংস্কৃতিক চর্চা চালিয়ে যেতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান। গত বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বই বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তিনি এই আহ্বান জানান।
২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রাকÑপ্রাথমিক, প্রাথমিক স্তর, ক্ষুদ্র নৃÑগোষ্ঠী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থী ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণের বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে বছরের প্রথম দিন থেকেই। এবার বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩৫ কোটি। এক দশক ধরেই এই কর্মসূচি চলে আসছে।
করোনার কারণে বিগত সালের মার্চের মাঝামাঝি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি আছে। করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে, অভিভাবকের দারিদ্র্য, কর্মচ্যুতি, জীবনÑজীবিকার লক্ষ্যহীনতার এই পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। অনলাইন, টিভি ও অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে ক্লাশ পরিচালনা চলছে কিন্তু গ্রামাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এ থেকে বঞ্চিত থাকছে। এতে বৈষম্য তৈরি হবার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। করোনাকাল আরো অনেকদিন হয়তো থেকে যাবে। সুতরাং পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্তÑসহজ করার প্রতিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে যাতে আর সময় নষ্ট না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
সরকারের মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ কর্মসূচি দেশেÑবিদেশে প্রশংসা পেয়েছে। সরকার শিক্ষার্থীদের পুষ্টিমান উন্নতিকল্পে মিডÑ ডে মিল চালুর কথা বলেছে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে অভিভাবকদের আর্থিক সাহায্যÑপ্রণোদনা দিতে হবে। কেননা শিক্ষাজীবন থেকে একবার ঝরে গেলে তাদের ফেরানো কঠিন হবে।
অন্যান্যবারের মতো পাঠ্যবই নিয়ে কোনোপ্রকার বিতর্কের সৃষ্টি হোক আমরা তা চাই না। কাগজ, ছাপা, পাঠ্যসূচি, বানান, বাক্যগঠন এসব নিখুঁত হওয়া চাই। জাতীয় শিক্ষানীতি, জাতীয় চাহিদা এবং আমাদের শিক্ষা সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতি রেখে সর্বোপরি সংবিধানের ৪ মূলনীতির আলোকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
উপরে সবকিছু ঠিক ঠিক মতো চললো কিন্তু ভেতরে গলদ থেকে গেলো, তাহলে শিক্ষার্থী ও জাতিকে তার জন্য চরম মূল্য দিতে হবে বিশেষত যেটি মানবসম্পদ তৈরির প্রধানতম সোপান।
মতামত সম্পাদকীয়