নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে ২০ শতাংশ : আইএসপিএবি

সুপ্রভাত ডেস্ক »

নতুন আইএসপি গাইডলাইন বাস্তবায়িত হলে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম গড়ে ২০ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলে শঙ্কা জানিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। সংগঠনটি বলছে, নতুন নীতিমালায় অযৌক্তিক রাজস্ব ভাগাভাগি, উচ্চ লাইসেন্স ফি এবং মোবাইল অপারেটরদের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার কারণে দেশীয় উদ্যোক্তারা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংগঠনের সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, নতুন গাইডলাইন বাস্তবায়িত হলে ঢাকায় ইন্টারনেটের দাম ১১ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। এতে সাধারণ গ্রাহক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ পুরো ডিজিটাল ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, সরকার ভুলপথে এগোচ্ছে। লাইসেন্স গাইডলাইনে জনআকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়নি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যে দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এই ব্যবসায় এসেছেন, তাদের আয়ের ওপরই এখন রেভিনিউ ও সামাজিক তহবিল (এসওএফ) চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নতুন গাইডলাইনে স্টারলিংকের লাইসেন্স ফি ১২ লাখ টাকা হলেও দেশীয় আইএসপিদের জন্য তা বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে ফি আড়াইগুণ এবং বার্ষিক ফি সাড়ে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। এমন বৈষম্য কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

আইএসপিএবি সভাপতি সতর্ক করে বলেন, গাইডলাইন সংশোধন না হলে দেশের বহু আইএসপি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে। প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহক ২০ শতাংশ বাড়তি দামে ইন্টারনেট নিতে পারবেন না। এর পরিণতিতে গ্রামীণ ইন্টারনেট সংযোগ এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই ঝুঁকিতে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, সরকার যদি সত্যিই জনগণের সরকার হয়, তবে জনগণের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব জনগণের হাতে ছেড়ে দিন।

এসময় তিনি ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে — 

১. সেলুলার মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএমএসপি) গাইডলাইন থেকে এফডাব্লিউএ ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস বাতিল করতে হবে।

২. সিএমএসপি গাইডলাইন থেকে হোম/অফিস/ইনডোর প্রাঙ্গণে ফাইবার কানেক্টিভিটি ডেপ্লয় করার অনুমতি বাতিল করতে হবে।

৩. সিএমএসপি গাইডলাইন থেকে সার্ভিস ডেলিভারির জন্য আইএসএম/ওয়াইফাই ব্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।

৪. বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী এফটিএসপি-এর জন্য অ্যাক্টিভ অবকাঠামো শেয়ারিং সংক্রান্ত গাইডলাইন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

৫. এফটিএসপি গাইডলাইন থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিং ও ১ শতাংশ সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড (এসওএফ) এবং উচ্চ লাইসেন্স ফি বাতিল বা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

৬. আইপিটিএসপি এসএমএস সার্ভিস ও মোবাইল ডায়ালার বিষয়ে বিস্তারিত কোনও নির্দেশনা নেই। এ দুটি বিষয়ে স্পষ্টীকরণ চাই।

৭. এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার) এবং জেলা এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার)-এর মধ্যে সার্ভিস বৈষম্য রাখা যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, অযৌক্তিক ফি বৃদ্ধি এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ফিক্সড কানেক্টিভিটির সুযোগ দেওয়া মানে দেশীয় বিনিয়োগকে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিভিন্ন ফি ও চার্জ আরোপের কারণে মুখে ফেলবে। নতুন খসড়া গাইডলাইনটির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে সাধারণ গ্রাহকের ওপর।

বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার খরচ অতিরিক্ত প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে এবং এফটিএসপি অপারেটরদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা মোটামুটি শতভাগ। তাই আমাদের বিষয়গুলো অবশ্যই সরকারকে বিবেচনা করতে হবে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আইএসপিএবির সহ-সভাপতি নেয়ামুল হক খান, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব আলম, যুগ্ম মহাসচিব ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন আহমেদ এবং পরিচালক রাশেদুর রহমান।