নিজস্ব প্রতিবেদক <<
রমজান, বাংলা নববর্ষ ও লকডাউনকে সামনে রেখে নগর ছেড়েছে মানুষ। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন উপেক্ষা করে ছুটছে গ্রামের পথে। একে লকডাউন, তার ওপর দুই উপলক্ষ কেন্দ্র করে ভিড় লেগেছে বাস স্টপেজ, স্টেশনসহ নদীপথে। এতে উপজেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়তে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া চাক্তাই খাতুনগঞ্জ এলাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে পণ্য নিয়ে যাওয়ার ধুম লেগেছে। পণ্য পরিবহন হচ্ছে সড়ক ও নৌপথে।
গতকাল মঙ্গলবার নগর ছাড়তে বাড়তি চাপ পড়েছে বাস স্টপেজগুলোতে। আন্তঃজেলা বাসগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না এসব জায়গায়।
সরেজমিনে নগরের বাস স্টেপজে দেখা যায়, বাড়ি ফেরা মানুষের যেন উৎসবের আমেজ। কারো মাঝে করোনা সংক্রমণের ছিটেফোঁটাও ভয়ের চিহ্ন দেখা যায়নি। কারো মুখে রমজানে বাড়ি ফেরার আনন্দ আবার কারো বা পরিবারের সাথে নববর্ষ উদযাপনের খুশি। পার্বত্য জেলার বাস ছাড়ার কারণে অক্সিজেন মোড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ব্যাপক মানুষের বাড়ি ফেরার চিত্র দেখা যায়। বাস কাউন্টারে টিকেট না পেয়ে কয়েকজন মিলে সিএনজি ট্যাক্সি রিজার্ভ করে নিয়েছে। কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় দেখা যায় বাড়ি ফিরতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সিএনজিতে ৫ থেকে ৬ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দেয় কাপ্তাইয়ের উদ্দেশে। অন্যদিকে, শাহ আমানত সেতু এলাকায় গিয়েও দেখা মিলে একই চিত্রের।
চাক্তাই এলাকায় স্লুইচ গেইটের কারণে ট্রলারগুলো রাখা হয়েছে নতুন ফিশারিঘাটে। ঠেলাগাড়ি, ভ্যান ও মিনি ট্রাকে করে খাতুনগঞ্জ থেকে পণ্য পরিবহন করে ভর্তি করা হচ্ছে ট্রলারে। এসব পণ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করছেন। লকডাউনে জরুরি পরিবহন সচল থাকার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা মানতে রাজি নন। শুধু পণ্য নয়, সাথে মানুষও পরিবহন করছে এসব ট্রলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘শহর ছেড়ে গ্রামে, গ্রাম ছেড়ে শহরে ছোটাছুটির কারণে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে চলেছে। তাছাড়া যে সকল উপজেলায় করোনা শনাক্তের হার কম সেখানে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে শূধু নিজের নয় বরং পরিবারেরও বিপদ কুঁড়িয়ে নিচ্ছে বলে জানান তারা।’
খাতুনগঞ্জ থেকে দোহাজারী পণ্য নিতে আসা রহিমুল আলম সুপ্রভাতকে বলেন, ‘লকডাউন দিলে তো পণ্য নেওয়া যাবে না। তাই রমজান উপলক্ষে মালামাল নিয়ে যাচ্ছি। লকডাউন বাড়ালেও আর চিন্তা থাকবে না।’
খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে মৃন্ময়ী মারমা বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে নববর্ষ উপলক্ষে বাড়ি যাচ্ছি। সারা বছর চট্টগ্রামে কাজ করি। বছরের এই সময়ে হলেও বাড়ি যেতে হয়।’
লোহাগাড়া যাওয়ার পথে শাহ আমানত সেতু এলাকায় আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানের শুরুটা বউ বাচ্চাদের সঙ্গে করতে চাই। লকডাউনে বাড়ি যাওয়া সম্ভব হবে না, তাই আজ চলে যাচ্ছি। আমার করোনা নেই, পরিবারেরও করোনা হওয়ার কোন চান্স নেই।’
করোনা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন না তো? এমন প্রশ্নে নেয়মত উল্লাহ বলেন, ‘হায়াত মউতের মালিক আল্লাহ। এমন হলে তো পরিবারের মুখ আর জীবনেও দেখবো না।’
এ মুহূর্তের সংবাদ