নগরে মুক্তাঙ্গন রাখার দাবি যৌক্তিক

একটি আধুনিক নগরে অন্তত এক চতুর্থাংশ মুক্তাঙ্গন রাখা জরুরি। সবুজ গাছপালা, জলাশয় এবং খোলা জায়গা পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখবে সে সঙ্গে নাগরিকদের স্বাস্থ্যরক্ষায় অবদান রাখবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তেমন পর্যাপ্ত খোলা জায়গা চট্টগ্রামে নেই। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে নগরে খোলা জায়গা নেই, জলাশয় নেই, পার্ক নেই।
নগরের সার্কিট হাউসের সামনে একসময় বিস্তর খোলা জায়গা ছিল। কিন্তু একটি সময়ে এসে সেখানে বাণিজ্যিক লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয় শিশুপার্ক। নাগরিকদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে শিশুপার্কটি অপসারণের পর সবাই ধরে নিয়েছিলেন জায়গাটি আগের মতো খোলা স্থান হিসেবে থাকবে। কিন্তু না। সে আশায় গুড়েবালি।

২৩ বছর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে এই জায়গা ইজারা নিয়েছিল সিটি করপোরেশন। ১৯৯২ সালে শিশুপার্ক স্থাপনের জন্য ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেড নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ইজারার মেয়াদ শেষ হলে ২০২০ সালে মাসিক মাত্র দেড় লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে প্রাতিষ্ঠানটির সঙ্গে আবারও ১৫ বছরের চুক্তি করে সিটি করপোরেশন। অবশেষে ২০২৩ সালের অক্টোবরে পার্কটি উচ্ছেদ করা হয়।

এবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সংলগ্ন স্থানকে সর্বজনীন নাগরিক মুক্তাঙ্গন ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম। সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদূল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সার্কিট হাউসের ঐতিহাসিক চত্বরে কোনো রকম স্থাপনা নির্মাণ না করে একটি সর্বজনীন মুক্তাঙ্গন হিসেবে ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, ১৯১৩ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত সার্কিট হাউসের উন্মুক্ত পরিসর সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে জনবান্ধব নাগরিক মুক্তাঙ্গনে পরিণত করা হোক। এই পরিসর নগরের কেন্দ্রে। ১৯৬১ লাল থেকে এখন পর্যন্ত যত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, সব কটিতে সার্কিট হাউসের সম্মুখের চত্বরটি একটি উন্মুক্ত পরিসর।

সার্কিট হাউন এবং আশপাশের উন্মুক্ত স্থান (প্রায় দশমিক ৮৯ একর) অনেক বছর পর্যন্ত একটি উন্মুক্ত মিলনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৯৯০ সাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক অনাকাঙ্গিকত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে স্থানটি ব‍্যবসায়িক ডিতিতে ইজারা দেয়। সে সময় সেখানে সীমানাপ্রাচীর ও স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে এই উন্মুক্ত পরিসর ধ্বংস করা হয়।

এই দাবিটি যৌক্তিক বলে মনে করি আমরা। কারণ এ স্থান উন্মুক্ত রাখতে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছাই যথেষ্ট বলে মনে করি আমরা। চট্টগ্রামের স্বার্থে, নগরের মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের স্বার্থে এই প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত রাখা জরুরি। স্মর্তব্য যে, মাত্র কয়েকবছর আগে নগরের ফুসফুস বলে খ্যাত সিআরবিতে একটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে তার নির্মাণ ঠেকিয়ে দিয়েছিল নগরবাসী।