নগরে প্রশাসনের নির্ধারিত দামে মিলছে না সয়াবিন

রাজিব শর্মা »

দুই মাস ধরে নগরে চলছে ভোজ্যতেল সয়াবিনের কৃত্রিম সংকট। তেলের এই সংকট কাটাতে একের পর এক অভিযান পরিচালনা করে খোদ জেলা প্রশাসন। সর্বশেষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে সয়াবিনের দর নির্ধারণ করে দেওয়ার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ঐ দরে নগরের কোথাও মিলছে না সয়াবিন। উপজেলাগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ঠিক আগের দরে। এতে প্রশাসনের নির্দেশিত সুফল পাচ্ছে না ক্রেতারা।
গতকাল মঙ্গলবার নগরের খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই ঘুরে দেখা যায়, যেসব দোকানে আগে সয়াবিন তেল বিক্রি হতো তাদের অনেকেই এখন সয়াবিন বিক্রি করছে না। আর যেসব তেল সয়াবিন বলে বিক্রি করছে মূলত তা পাম ও সুপার পাম তেল। আবার এসব তেলও বিক্রি করছে জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি। বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের দর নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলছে লুকোচুরি দর নির্ধারণ। খোলা বাজারে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। আর বোতলজাত সয়াবিন ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়।
বকসিরহাট থেকে আসা সয়াবিন তেল ক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলা প্রশাসন ১৬০ টাকা সয়াবিন দর নির্ধারণ করলেও ঐ দরে কেউ সয়াবিন বিক্রি করছে না। আমি খোলা পিউর সয়াবিন কিনেছি লিটার ১৮০ টাকা। যার থেকে যেমন বিক্রি করা যায় সেই দরে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গতবছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। অর্থাৎ প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৭ থেকে বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। খোলা পাম তেল লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।
গত ৪ মার্চ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে সেই দাম লিটারে ৩ টাকা বাড়িয়ে খুচরা পর্যায়ে খোলা তেলের দাম লিটার ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানিকারকেরা ১৫৩ টাকা দরে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করবেন। পাইকারি পর্যায়ে তা ১৫৫ এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা বিক্রি করা যাবে।

প্রশাসনের নির্দেশনার প্রভাব পড়ে নি
খুচরা মুদি ব্যবসায়ী মো. ফারুক বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দর নির্ধারণে জেলা প্রশাসক ও চসিক হুঁশিয়ারি করলেও তার বিন্দুমাত্র প্রভাব বাজারে পড়েনি। প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে মিলার ও ডিলাররা ঐ দরে বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করছে না। অনেক সয়াবিন ব্যবসায়ী তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন। মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। আর কয়েকটি কোম্পানি সয়াবিন সরবরাহ করলেও তা পর্যাপ্ত না। ফলে খুচরা বিক্রেতারা কেউ কেউ সয়াবিন বিক্রি না করে তার পরিবর্তে পাম বা সুপার পাম বিক্রি করছে সয়াবিনের নামে। প্রশাসনকে সরবরাহকারী পর্যায়ে তদারকি বাড়াতে হবে।’

খাতুনগঞ্জের মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা দর নির্ধারণ করে
চাক্তাই তেল বিক্রির প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ব্যবসায়ী মো. জামিল বলেন, ‘ডিলাররা আমাদের পাম বা সুপার সরবরাহ করছে। তেমন সয়াবিন দিচ্ছে না। যা সয়াবিন দিচ্ছে তা পর্যাপ্ত না। আর এসব সয়াবিনের দরে সরবরাহকারীরা সরাসরি কথা না বললেও তাদের মধ্যস্বভোগীরা দর নিধার্রণ করে দিচ্ছে। প্রশাসন হুঁশিয়ারি করলেও কার্যত ডিলার ও সরবরাহকারী পর্যায়ে তদারকি হচ্ছে না।’

পর্যাপ্ত সয়াবিনের আমদানি
বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। গত ৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনা থেকে ‘এমটি আরডমোর শায়ানি’ ও ‘এমটি ডাম্বলডোর’ নামের দুইটি জাহাজে বন্দরে আনা হয় ২১ হাজার ৫০০ টন সয়াবিন তেল। ১০ ডিসেম্বর ব্রাজিল থেকে ‘এমটি সানি ভিক্টরি’ ও আর্জেন্টিনা থেকে ‘এমটি জিঙ্গা থ্রেশার’ জাহাজে আনা হয় ৩০ হাজার ৬০০ টন সয়াবিন তেল। এই চার জাহাজে টিকে গ্রুপ ২৫ হাজার টন, সিটি গ্রুপ ২০ হাজার টন ও মেঘনা গ্রুপ ৭ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি করে। আরও তেল পাইপলাইনে রয়েছে। জানা যায়, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। সে অনুযায়ী বাজারে সয়াবিন তেলের ঘাটতি থাকার কথা নয়।
এদিকে বাজার তদারকিতে জেলা প্রশাসন, চসিক ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, বাজার তদারকিতে ভোক্তা অধিকারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোন অভিযোগে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।