চিকিৎসকরা বলছেন করোনার প্রভাব
রিমন সাখাওয়াত »
বেশ কিছুদিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছেন বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আওয়াল। চার বছরের শিশু সন্তান আরিয়ানেরও একই পরিণতি। এদিকে স্ত্রী রুকসানা মরিয়মও শুক্রবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত। তারা ঘরে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘বুধবার অফিস থেকে ঘরে ফিরে শরীরটা কেন যেন নিস্তেজ হয়ে গেছে। রাত বাড়তেই জ্বর-সর্দি ও কাশির সঙ্গে শরীর ব্যথা দেখা দেয়। টেলিফোনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে চিকিৎসা নিচ্ছি। একদিন পর বৃহস্পতিবার ছেলেরও একইভাবে জ্বর, সর্দি-কাশি, বমি ও ডায়রিয়া শুরু হয়। ঘরবন্দী এ অবস্থায় স্ত্রীও একইভাবে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। তবে সকলেই বাসায় আছি। শারীরিক অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হলেও পরিবারের বাকি দু’জনের এখনও সারেনি।
এদিকে দেওয়ান বাজার এলাকার ব্যাচেলর বাসায় বসবাসরত সুবর্ণ বিশ্বাস। তার মেস পার্টনাররা একই সমস্যায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাচেলর বাসায় অসুস্থ হলে সেবা করার মানুষ পাওয়া যায় না। একই সাথে মেস পার্টনারেরও অসহনীয় অবস্থা। মাথাব্যথা, সারা শরীর ব্যথা, জ্বর আবার কারোর বুকব্যথা কারও এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে তিনজন বাড়িমুখি হয়েছে। দুজন চাকরি রক্ষার জন্য আছি। প্রতি বেলায় হোটেল থেকে খাবার খেয়ে দিনাতিপাত করছি। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাচ্ছি। লেবু, গরম পানি, রং চা খেয়ে সর্দি কন্ট্রোলের চেষ্টা করে চলেছি।’
একইভাবে জ্বরসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন ইপিজেড এলাকার উজ্জ্বল বড়ুয়ার পরিবার। তিনি বলেন, গত সপ্তাহের প্রথম দিকে বাবার জ্বর হয়েছিল। তিনি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর ক্রমান্বয়ে পরিবারের সকল সদস্য জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। ছোট ভাইয়ের জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়াও হয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসা নিয়েছি সবাই।’ করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি সাধারণ জ্বর। গত কয়েকদিন ধরে শীত বেশি হওয়াতে এমনটা হচ্ছে। তবে সাধারণ খাবারের চেয়ে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে নির্দেশ দিয়েছেন চিকিৎসক।’
নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এ কয়েকেদিনে তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিরাও বাদ পড়ছে না এ জ্বর থেকে। তবে বেশিরভাগ মানুষই করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে চান না।
জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া এটাই করোনা ভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুশান্ত বড়ুয়া। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘যতক্ষণ এটি অন্য কিছু নয় বলে প্রমাণ করা যাবে না, এটাকে ওমিক্রনই ধরে নিতে হবে। কারণ এখন সারাদেশব্যাপী ফ্লু সিজন চলছে। আর ফ্লু মানে করোনা ফ্লু’তেই আছি। দেশসহ সারাবিশ্বে ওমিক্রন নিউ ভ্যারিয়েন্ট। ফলে যেই প্রাদুর্ভাব চলছে, সেটাকে ধরে নেওয়া প্রথম কর্তব্য।’
একই ধারণা ব্যক্ত করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মুহাম্মদ গোফরানুল হক সুপ্রভাতকে বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে ওমিক্রনের সম্ভাবনাও বাদ দেওয়া যাবে না। জ্বর, সর্দি-কাশি এ সময়ে বিশেষ করে ভাইরাসের কারণে হতে পারে।কারণ করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। যেহেতু এখন করোনাকাল এবং ওমিক্রন ছড়াচ্ছে। ওমিক্রন সন্দেহ করছে বিশেষজ্ঞরা। সেই কারণে ওমিক্রনের সম্ভাবনাও বাদ দেওয়া যাবে না।’
জ্বরে আক্রান্ত হয়ে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে এমন লক্ষণ নিয়ে যারা নমুনা পরীক্ষা করছে তারা পজিটিভ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের প্রধান ডা. আব্দুর রব মাসুম। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এ সময়ে এমন লক্ষণগুলোকে ওমিক্রন বলা চলে।’
এই প্রাদুর্ভাব থেকে পরিত্রাণের উপায় বলতে গিয়ে ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘সাধারণ ফ্লু’র যে চিকিৎসা সেটা নিতে হবে। এইসব উপসর্গ দেখা দিলে করোনা মনে করে পরিবারের সুস্থ সদস্যদের কাছ থেকে যথাসম্ভব আইসোলেশন বজায় রাখতে হবে। যদি পরিবারের সবাই এমন জ্বরে আক্রান্ত হয় তখন আইসোলেশনের দরকার নেই। তবে পরিবারের বয়জ্যেষ্ঠ অথবা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত যারা থাকবেন তাদের জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়া আর তেমন কিছু আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন ডা. মুহাম্মদ গোফরানুল হক। তিনি বলেন, ‘এসব যদি অন্যান্য ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে তবে সাধারণ চিকিৎসায় তা সেরে যাবে। তবে করোনা হলে অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা অনুসরণ করতে হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে। ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আসতে হবে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কোলাহলে যাওয়া যাবে না। ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। বদ্ধঘরে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। মুখ, নাক ঢেকে মাস্ক পড়তে হবে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এটি ভাইরাল ফ্লু আবার করোনাও হতে পারে। এক্ষেত্রে করোনা নমুনা পরীক্ষায় অনেকের পজিটিভ আসছে, অনেকের নেগেটিভ। সবগুলো কোভিড বা সবগুলো কোভিড নয় তা বলা যাবে না। জিনম সিকোয়েন্স করা না হলে ওমিক্রন বলা যাবে না। তবে কোভিড রোগী আগের তুলনায় বাড়ছে।’