নগরে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত থামান

চট্টগ্রামের হালিশহরে দুটি কিশোর গ্যাংয়ের রেষারেষিতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে কলেজছাত্র ওয়াহিদুল হক। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত থাকা তিন তরুণ হত্যাকাণ্ডের সময়ের এক ভয়ংকর বর্ণনা দিয়েছে। তাদের কথায় জানা যায় বাসা থেকে ঢেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করা হয় ওয়াহিদুলকে। ছুরিকাঘাতের পর ক্ষতস্থান দিয়ে বেরিয়ে পড়া নাড়িভূড়ি হাতে চেপে দৌড়েও ওয়াহিদুল হক বাঁচতে পারেননি।

নিহত ওয়াহিদুল হক ওরফে সাব্বির (১৮) নগরের মুরাদপুর এলাকায় শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী। ১৬ মে জুমার নামাজ শেষে এক বন্ধু তাঁকে হালিশহর নয়াবাজার এলাকায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে চারটি অটোরিকশায় এসে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ওয়াহিদুলকে ছুরিকাঘাত করে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বুধবার তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওয়াহিদুলের বাবা মোহাম্মদ এসহাক বাদী হয়ে হালিশহর থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিনহাজুল ইসলাম নামের এক কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। গত সোমবার মিনহাজুল আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে সে ১০-১২ দিন আগে এলাকার এক কিশোরকে মারধরের প্রতিশোধ হিসেবে ওয়াহিদুলকে ছুরিকাঘাত করার স্বীকার করে ।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় দুটি কিশোর গ্যাং বিংগু ও পাইথনের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ফলেই এই হত্যাকাণ্ড। পুলিশ জানায়, ওয়াহিদুল বিংগু গ্রুপের এবং তাঁকে মারধর করা গ্রুপটি পাইথন নামে পরিচিত। স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে পত্রিকায় অভিযোগ করা হয়, যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মো. আসলাম কিশোর গ্যাংয়ের দুটি গ্রুপকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। দুটি গ্রুপে ৩০ থেকে ৪০ জন করে সদস্য রয়েছেন। স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন দোকান ও কারখানায় কাজ করা ১৬ বছরের কিশোর থেকে ২২ বছরের তরুণ রয়েছেন ওই সব গ্রুপে।

চট্টগ্রাম নগরে বর্তমানে ২০০ কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে বলে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে। দুই বছর আগে পুলিশের করা তালিকায় এ তথ্য পাওয়া যায়। একেকটি দলে রয়েছেন ৫ থেকে ১৫ জন। নগরজুড়ে এসব গ্যাংয়ের সদস্যসংখ্যা অন্তত ১ হাজার ৪০০। পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রশ্রয়ে ৬৪ ‘বড় ভাই’ আছেন। গত ৬ বছরে ৫৪৮টি অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং জড়িত বলে জানায় পুলিশ।

গত বছরের মার্চে নগর পুলিশের করা এক জরিপে উঠে আসে, চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে অনুপস্থিত থাকা ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই জড়িয়ে পড়েছে অপরাধে। নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সামাজিক অস্থিরতা ও কিশোর গ্যাংয়ের উত্থানের কারণ খুঁজতে গিয়ে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার তথ্য পায় পুলিশ।
এমন ভয়ংকর হয়ে ওঠা কিশোর গ্যাংকে দ্রুত প্রতিহত না করলে আরও কত মায়ের কোল খালি হবে তা বলা যাচ্ছে না।