পাঁচ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নগরের সড়কগুলো । ৩৮৮টি সড়কের ১৪২ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর ভেঙেছিল ১০০ কিলোমিটার। ২০২৩ সালে ৫০ কিলোমিটার, ২০২২ সালে ১০০ কিলোমিটার ও ২০২১ সালে ৩৬ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়েছিল।
পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করায় নগরের আগ্রাবাদে সিডিএ আবাসিক এলাকার প্রায় সব সড়ক এখন ভাঙাচোরা। নগরের দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে এ এলাকার অবস্থান। নগরের সবচেয়ে বেশি ৫৫টি সড়ক ভেঙেছে এই ওয়ার্ডে।
নগরের বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের ২ নম্বর গেট থেকে অক্সিজেনমুখী অংশে খানাখন্দ ভরাট ও পিচঢালাই (কার্পেটিং) করার কাজ চলছে। তবে অক্সিজেন থেকে ২ নম্বর গেটমুখী অংশে রয়েছে গর্ত। বিশেষ করে উড়ালসড়কের র্যাম্পের নিচে বেবি সুপারমার্কেট এলাকার অবস্থা বেশি কাহিল।
নগরের সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের ২ নম্বর গেট মোড়ের আশপাশেও ঢালাই উঠে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সিআরবির সড়কগুলোরও একই অবস্থা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা দেখা গেছে স্ট্র্যান্ড রোডের। সেখানে বড় বড় গর্তে জমে আছে পানি, যা দিয়ে গাড়ি চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অবশ্য সে রাস্তা অধিকাংশ সময় খারাপ থাকে।
বেশি বৃষ্টি হলেই চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সব ভাঙে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভাঙা রাস্তার তালিকা করে। এবারও তালিকা করেছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ৩৮৮টি সড়ক ভেঙেছে। বিধ্বস্ত রাস্তার পরিমাণ ১৪২ কিলোমিটার। পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সড়ক সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া রাস্তা ঠিক করতে করপোরেশনের লাগবে ৪২০ কোটি টাকা।
এ কারণে যানজটের সমস্যায় ভুগছেন চালক ও যাত্রীরা। আবার ভাঙা রাস্তার কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বারবার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য দুটি কারণকে দায়ী করছেন সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা। তাঁদের মতে, ভারী বর্ষণ হলে সড়কে পানি জমে যায়। তখন বিটুমিনের রাস্তায় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। আর নগরের রাস্তাঘাটগুলো করা হয় ১০ থেকে ২০ টন ওজনের বহনক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু বন্দর থাকায় এখানে ৫০ থেকে ৬০ টনের গাড়িও চলে। ভারী ওজনের গাড়ি চলাচলের কারণে রাস্তা নষ্ট হয়। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দুটি কারণের পাশাপাশি সড়ক সংস্কারকাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার পালিত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একটি সড়ক পরিকল্পিতভাবে করা হলে অন্তত ১০ থেকে ১৫ বছর টিকে থাকার কথা। চট্টগ্রাম নগরের ড্রেনেজব্যবস্থা ভালো নয়, যার কারণে সড়কগুলো অনেক সময় পানিতে ডুবে থাকে। এ কারণে সড়ক নষ্ট হয়। তবে নির্মাণকাজে মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার না করা, ঠিকাদারদের তদারক না করার কারণে কাজগুলো হয় যাচ্ছেতাই। ফলে অল্প দিনেই সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়ে।’