নগরের সড়কগুলো দখলমুক্ত করুন

একটি আধুনিক নগরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরে আছে মাত্র ৬ থেকে ৭ শতাংশ। তার ওপর আবার এর বড় অংশ থাকে অবৈধ দখলে।
একটি দৈনিকে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সড়কের পরিমাণ ৮শ কিলোমিটারের মতো। পাকা, আধা পাকা এবং কাঁচা মিলে এই সড়কের পরিমাণ শহরের ৬ থেকে ৭ শতাংশ। অথচ মানসম্পন্ন এবং বাসযোগ্য একটি শহরে রাস্তার পরিমাণ হওয়ার কথা ২০ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম নগরীতে ৪শ কিলোমিটারের মতো পিচ করা রাস্তাসহ প্রায় ৮শ কিলোমিটারের মতো সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে কার্পেটিং করা রাস্তার সংখ্যা ৫১৭টি, ব্রিক সলিং করা রাস্তার সংখ্যা ৬৭৮টি এবং কাঁচা রাস্তার সংখ্যা ৫৯৬টি। অলি–গলি, রাজপথসহ সব মিলিয়ে শহরটিতে রাস্তার পরিমাণ ৬ থেকে ৭ শতাংশ। নগরীতে বর্তমানে ৭০ লাখের বেশি মানুষ এবং প্রায় দুই লাখ যানবাহন চলাচল করছে। এর মধ্যে জিপ ও মোটর কার হচ্ছে প্রায় চল্লিশ হাজার, ট্রাক ও পিকআপ প্রায় বিশ হাজার, মিনিবাস প্রায় আট হাজার, বাস প্রায় তিন হাজার। এছাড়া সিএনজি টেক্সি, মোটরসাইকেল মিলে যানবাহনের সংখ্যা দুই লাখ ছুঁইছুঁই। এর বাইরে নগরীর অলি–গলি, রাজপথ জুড়ে দেড় লাখের মতো রিকশা চলাচল করছে। রাস্তা জুড়ে নানা গতির নানা রকমের যানবাহনের বিশাল চাপ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি বাসযোগ্য এবং বিশ্বমানের শহরের গতিশীলতার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে রাস্তা।
নিউ ইয়র্কে রাস্তার পরিমাণ ৩০ শতাংশ, টোকিওতে ২০ শতাংশ, লন্ডনে ২২ শতাংশ, বার্সেলোনায় ২৫ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১৬ শতাংশ ও প্যারিসে ২৫ শতাংশ। অথচ চট্টগ্রাম শহরে রাস্তার পরিমাণ ৬–৭ শতাংশ। রাস্তার বড় একটি অংশ রয়েছে অবৈধ দখলে। নানা ধরনের উন্নয়ন কাজের কাটাকুটি হয় সড়কের উপরে। অবৈধ হকার, দোকানপাট, রিকশা টেক্সি স্ট্যান্ড, বাস–ট্রাক কিংবা প্রাইভেট কারের অবৈধ পার্কিং, গুরুত্বপূর্ণ সড়কজুড়ে অবৈধ বাস স্টেশনের কারণে নগরজীবনে রাস্তার সংকট প্রকট হয়ে উঠছে।

এত স্বল্প পরিমাণের রাস্তার একটি বড় অংশ আবার বছরজুড়ে দখলে থাকে। নগরীর এমন কোনো রাস্তা নেই যার কোনো না কোনো পয়েন্টে দখল বেদখল চলছে। ফুটপাতে হকার, রাস্তার উপর অবৈধ পার্কিং, স্টেশন রোড এবং গরিবুল্লাহ শাহ (র.) এলাকায় অবৈধ বাসস্ট্যান্ড, মোড়ে মোড়ে অবৈধ সিএনজি টেক্সি স্ট্যান্ড, রিকশা স্ট্যান্ড, রাস্তার উপর গাড়ি রেখে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করা হয় শেখ মুজিব রোডে, আগ্রাবাদের রাস্তার বড় অংশ চলে যায় হকারদের দখলে। জিইসি মোড়, জামালখান মোড়, নিউ মার্কেট মোড়, লালদিঘি পাড়, চকবাজার, বহদ্দারহাট, ষোলশহর, দুই নম্বর গেটসহ নগরীর এমন কোনো মোড় নেই যেখানে কোনো না কোনোভাবে দখলদারিত্ব চলছে না। ফুটপাতসহ রাস্তার একটি বড় অংশে যান চলাচলের সুযোগ না থাকায় যানজট তীব্র হয়। নগরীর বিভিন্ন সড়কে উন্নয়নমূলক কিছু কার্যক্রম চলছে। যেগুলো নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমরা সাজানো-গোছানো একটি আধুনিক নগর গড়ে তুলতে পারলাম না। সেটি আমাদের বড় একটি ব্যর্থতা। রাজধানী ঢাকা হোক বা চট্টগ্রাম হোক, সারা বছর জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, মেরামত, নির্মাণের কাজ চলতে থাকে। কতজন কত ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু কাজের বলা সেই লবডঙ্কা।