নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে

একটি সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকায় বিপুল সংখ্যক ভবনকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়; এটি অগণিত মানুষের জীবনের ওপর ঝুলন্ত এক নীরব বিপদ, যা যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এ ভবনগুলোর বেশিরভাগই পুরনো, নির্মাণ ত্রুটিযুক্ত এবং এগুলো আধুনিক বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হয়নি। সময়ের সাথে সাথে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এদের কাঠামো আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্ষার সময়ে অতিবৃষ্টি, ভূমির কম্পন, অথবা সামান্য অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনাও এই জীর্ণ ভবনগুলোর জন্য মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভবনগুলিই হবে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া একটি ভবন ধসের ঘটনা এই ঝুঁকিকে আরও স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল, যেখানে বেশ কয়েকজন হতাহত হন। অথচ, দুঃখজনকভাবে, সেই ঘটনা থেকেও যেন প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেওয়া হয়নি।
​এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নোটিশ টাঙানো, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেওয়া। কিন্তু, এই পদক্ষেপগুলো মনে হয় লোক দেখানো, স্থায়ী সমাধান নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্থানীয় প্রভাব এবং আইনি জটিলতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙা বা সংস্কারের কাজ থমকে থাকে। ভবন মালিকদের অসহযোগিতা, পর্যাপ্ত সরকারি অর্থায়ন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এই প্রক্রিয়াকে আরও মন্থর করে তোলে। অনেক পুরোনো ভবনের মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকায় চসিকের পক্ষে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও বহু ভবনেই এখনো মানুষ বসবাস বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, যা প্রশাসনের নজরদারির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
​এই নীরব বিপদ থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত এবং কঠোর পদক্ষেপ।
​চট্টগ্রাম নগরের উন্নয়ন কেবল নতুন সেতু বা ফ্লাইওভার নির্মাণে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। এর অধিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেকোনো নগর কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব। একটি সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয় এড়াতে, চট্টগ্রাম নগর কর্তৃপক্ষকে আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুত, দৃঢ় এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে এই গাফিলতি আর চলতে দেওয়া যায় না। নাগরিকদের জীবন রক্ষায় এখনই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।