অক্সিজেন ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের #
ভূঁইয়া নজরুল :
পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে চালু হওয়া বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড হাসপাতালে ঙ্গলবার দুপুরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক মুমুর্ষ রোগী আসে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন হাসপাতালটির প্রধান সমন্বয়ক ডা. হোসেন আহমেদ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি ফিল্ড হাসপাতাল চালু হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের আদলে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছি। কিন্তু মুমুর্ষ রোগীদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে পাঠাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবো। একইসাথে এলাকার সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। এরমধ্যে যারা বাসায় থাকতে পারবে না, তাদের জন্য এখানে থাকা এবং শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য অক্সিজেনও রাখা হয়েছে।
শুধু পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় নয়, নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা সীকম গ্রুপের সহযোগিতায় সিটি কনভেনশন হলে চালু হয়েছে ২৫০ শয্যার কোভিড আইসোলেশন সেন্টার। পোর্ট কানেকটিং রোডে ৮ তরুণের উদ্যোগে এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন নেতৃত্বে এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিনের সহযোগিতায় প্রিন্স অব চিটাগাং এ গড়ে উঠেছে ১০০ শয্যার ‘করোনা আইসোলেসন সেন্টার’। আগামী মাসের শুরুতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের কাছে বি কে কনভেনশন সেন্টারে চালু হচ্ছে ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার। পুরাতন বাকলিয়া থানা এলাকায় এক কমিউনিটি সেন্টারে ৫০ শয্যার আরো একটি আইসোলেশন সেন্টার চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সবমিলিয়ে ৬০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত হচ্ছে।
এভাবে আইসোলেশন সেন্টার চালু হওয়াকে পজিটিভ আখ্যা দিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এবং জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্ব¡াবধায়ক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলা অবশ্যই ভাল উদ্যোগ। স্থানীয়ভাবে কম মুমুর্ষ রোগীদের এসব জায়গায় প্রাথমিক চিকিৎসার পর মুমুর্ষ রোগীদের আমাদের এখানে পাঠালে আমরা বিশেষায়িত সেবা দিতে পারবো। এতে মানুষেরও উপকার হবে।’
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের আইসোলেশন সেন্টারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের ওখানকার রোগীদের আমাদের এখানে পাঠিয়ে দেবে।
আাইসোলেশন সেন্টারগুলোতে কি চিকিৎসক থাকবে?
আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে সিটি কনভেনশন হলে চালু হওয়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আইসোলেশন সেন্টারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চিকিৎসকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এবিষয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা রোগীদের সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা রেখেছি। শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য অক্সিজেনর সিলিন্ডার রাখা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসকও রাখা হয়েছে।’
অপরদিকে পোর্ট কানেকটিং রোডে প্রিন্স অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে চালু হওয়া ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম’ এ চিকিৎসক রয়েছে বলে উদ্যোক্তাদের একজন সাদ শাহরিয়ার জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ১২ জন চিকিৎসক, ৪ জন নার্স, ২ জন ওয়ার্ডবয় কাম টেকনেশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি। এছাড়া সহায়তার জন্য রয়েছে ২১ জন স্বেচ্ছাসেবক। বহির্বিভাগে রোগীদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি যাদের প্রয়োজন তাদেরকে আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করানো হচ্ছে এবং অক্সিজেন সুবিধাসহ ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
অপরদিকে ‘বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড হাসপাতাল’ নামে পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে চালু হওয়া হাসপাতালটি সাদার্ন মেডিকেল কলেজের ডাক্তার হোসেন আহমেদের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে। এখানেও চার জন ডাক্তার, তিন জন নার্স, দুই জন ওয়ার্ডবয়, দুই জন আয়া নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে হাসপাতালটির মিডিয়া সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম দুর্লভ জানান। তিনি আরো বলেন, ‘চিকিৎসা কার্যক্রমে সহায়তার জন্য আমাদের ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। আর ডাক্তার নার্সসহ মেডিকেল এসিটেন্ট হিসেবে যারা আছেন তারা সবাই বেতনধারী।‘
পতেঙ্গা ও বাকলিয়ায় আরো দুই আইসোলেশন সেন্টার পাইপ লাইনে
পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের পাশে বি কে কনভেনসন সেন্টারে চালু হচ্ছে ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার কাম হাসপাতাল। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এটি পরিচালিত হবে বলে জানান ফাউন্ডেশনের মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মানুষের সেবা করতে এই হাসপাতালটি চালু করছি। এজন্য ১২ জন ডাক্তার, ১৮ জন নার্স এবং ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা পুরো হাসপাতাল কার্যক্রম হিসেবে এটি পরিচালিত করবো।’
অপরদিকে বাকলিয়ায় কিছু উদ্যমী তরুনের নেতৃত্বে একটি আইসোলেশন সেন্টার কাম ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। এবিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম রনি বলেন, ‘আমরা কমিউনিটি সেন্টার খুঁজছি, পাচ্ছি না। তবে শিগগিরই হয়তো একটি পেয়ে যাবো। আর তা পেলেই প্রাথমিকভাবে ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার দিয়ে কাজ শুরু হয়ে যাবে।’ একইকথা বলেন ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক। তিনি বলেন,‘কমিউনিটি সেন্টার মালিকরা কেউ আইসোলেশন সেন্টার চালুর জন্য দিতে চায় না। আমরা তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেকোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
অক্সিজেন ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে
চট্ট্গ্রাম তথা বাংলাদেশে ফিল্ড হাসপাতাল চালুর পথিকৃত ডা. বিদ্যুৎ বড়–য়া। নগরীর সিটি গেইট এলাকায় তিনি ৫০ শয্যার একটি ফিল্ড হাসপাতাল চালু করে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালের সাফল্য ৯৯ শতাংশ। নগরীতে আইসোলেসন সেন্টার কাম ফিল্ড হাসপাতাল চালু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইসোলেশন সেন্টার ও ফিল্ড হাসপাতাল এক নয়। বাসায় থাকার জায়গা না থাকলে যে কেউ আইসোলেশন সেন্টারে থাকতে পারবে। আর ফিল্ড হাসপাতালে থাকবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক টিম এবং সেখানে ট্রিটমেন্ট দেয়া হবে।’
তিনি আরো বলেন, নগরীতে চালু হতে যাওয়া আইসোলেশন সেন্টার বা ফিল্ড হাসপাতাল যা-ই চালু হউক না কেন অবশ্যই মেডিক্যাল উপকরণ ব্যবহার হতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। একজন রোগীর জন্য কতটুকু অক্সিজেন লাগবে তা কিন্তু একজন চিকিৎসক ভাল বলতে পারবে। তাই এবিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
একই সতর্কতার কথা উল্লেখ করেছেন বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড হাসপাতালের প্রধান সমন্বয়ক ডা. হোসেন আহম্মেদ। তিনি বলেন,‘ অতিরিক্ত অক্সিজেন ব্যবহারেও কিন্তু মানুষের মৃত্যু হয়। তাই মেডিক্যাল উপকরণ ব্যবহারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’
অপরদিকে আইসোলেসন সেন্টারগুলো চালু হওয়াটাকে পজিটিভ আখ্যায়িত করা হলেও অক্সিজেন ব্যবহর নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘নগরীতে আইসোলেশন সেন্টার চালু হওয়া ভালো উদ্যোগ। তবে অক্সিজেন সরবরাহের সময় খেয়াল রাখতে হবে। আর অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি সাপোর্ট দিতে পারে না, আবার সেগুলোতে প্রেসারও কম থাকে। তাই সতর্কতার সাথে এগুলো ব্যবহার করা প্রয়োজন।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় সরকারিভাবে জেনারেল হাসপাতালে ১১০ শয্যা, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে ৩০ শয্যা, চট্টগ্রাম মেডিক্যোল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যা চালু করা হয়েছে। এছাড়া হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০০ শয্যা রয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৫০ শয্যার করোনা চিকিৎসা ইউনিট চালু করতে যাচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৪০৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এদের মধ্যে মারা গেছেন ১২১ জন।