চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের বিস্তারের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান এই অবস্থা উদ্বেগজনক। নগরীতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র অপ্রতুল। সংক্রমণ বিস্তার প্রতিরোধে আরো চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। নগরীতে স্বাস্থ্য সেবাদানকারী অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয় করে সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতালকে ১৫০ শয্যা, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে ৮০ শয্যা, ভাটিয়ারীস্থ বিএসবিএ হাসপাতালকে ১০০ শয্যা এবং পরর্বতীতে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, আগ্রাবাদস্থ সিটি হলে ৩০০ শয্যা ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালকে ১০০ শয্যা করোনা আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হয়েছে।
নগরীর সার্কিট হাউস মিলনায়তনে এক সমন্বয় সভায় আজ ২৯ মে (শুক্রবার) মেয়র একথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমশিনার এবিএম আজাদ, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মজিবুল হক খান প্রমুখ।
সিটি মেয়র আরো বলেন, করোনা পরস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণের আগে সমন্বিত উদ্যোগে সুদৃঢ় প্রতিরোধকল্পে এখন যা আছে তার চেয়ে আরো বেশি চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থাপন করতে পারলে অবশ্যই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ভ্যাকসিন ও প্রতিষেধক আবিস্কৃত না হওয়ায় করোনা পজিটিভদের কোয়ারেন্টাইন, আইসোলশন ও লাইভ সাপোর্টের জন্য স্থাপিত চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মূল ভরসা। এ ধরনের চিকিৎসা কেন্দ্র যতই বৃদ্ধি পাবে ততই পরস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। ঘাপটি মেরে ঘরে বসে থাকার সময় নেই এখন। মানব কল্যাণে অবদানের জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। জনপ্রতিনিধিরা জনগণকে সচেতনতার পাশাপাশি যদি নতুন চিকিৎসাসেবার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন তাহলে জনগণ উপকৃত হবেন।
করোনা চিকিৎসায় নব্য সাফল্যপ্রাপ্ত প্লাজমা (রক্তের জলীয় অংশ) থেরাপির কথা উল্লেখ করে সভায় মেয়র বলেন, করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির প্লাজমা সংগ্রহ করে অন্য করোনা পজেটিভ রোগীর শরীরে তার রক্তের মাধ্যমে প্রয়োগ করে এই রোগ থেকে মুক্তি মিলছে -এমন আশার কথা শোনাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এতে মাত্র ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এছাড়া কোনো ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও নেই। করোনা জয় করার ১৪ দিন পর অ্যাফেরেসিস মেশিনের সাহায্যে ওই ব্যক্তির শরীর থেকে ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিলিটার প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। এই পদ্ধতিতে রক্তকণিকা প্লাজমাদাতার শরীরে ফিরে যায়। একজন প্লাজমাদাতা চাইলে ২৮ দিন পর আবারও প্লাজমা দিতে পারেন। তবে যেসব জায়গায় এই অ্যাফেরেসিস মেশিন নেই, সেখানে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের পর সেন্ট্রিফিউজ করে প্লাজমা আলাদা করা যেতে পারে এবং তা প্রয়োজন মতো করোনার রোগীকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি বেশ পুরোনো একটি পদ্ধতি। চট্টগ্রামে প্লাজমা থেরাপির বিষয়ে এখনই একটি সমন্বিত কর্মকৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন। চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় দুইশজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, যাদের রক্ত সংগ্রহ করে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া সম্ভব পাঁচ শতাধিক সংকটাপন্ন রোগীকে। কিন্তু এসব ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ বা সংশ্লিষ্ট কোনো ডাটাবেজ এখনো পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি।
মেয়র চিকিৎসকদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এখন থেকে করোনা জয়ীদের ডাটা সংগ্রহে রাখুন। এই থেরাপীর আনুসাঙ্গিক বিষয় সহজলভ্য হলে যাতে তাদের কাজে লাগানো যায়।
আগামীকাল থেকে নগরীতে ৬ টি করোনা টেস্টিং বুথ পুরোদমে চালু হতে যাচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে- জামাল খান প্রেস ক্লাব, ফিরিঙ্গীবাজার, ছোটপুল, বিবিরহাট, চান্দগাঁও এবং পতেঙ্গায়। এগুলোতে নগরবাসীকে সেবা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সিটি মেয়র। বিজ্ঞপ্তি
স্বদেশ