নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরীতে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুরের পর থেকে বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় বাতাসও। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় হওয়ায় চট্টগ্রামে বৃষ্টি বেড়েছে। এতে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাহাড়ধসের আশঙ্কায় নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হচ্ছে। পাহাড়ের বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা আবদুল বারেক জানান, আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। আর এর আগে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে সংস্থাটি।
নগরীতে কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিপাতে নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টিপাত।
এতে নগরীর আগ্রাবাদ, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, মুরাদপুর এলাকায় জলজট তৈরি হয়। ফলে এসব এলাকায় বাড়ে জনদুর্ভোগ।
পূর্বাভাস কর্মকর্তা আরও বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে, যা আজ সকালের পর থেকে আরও বেড়ে যায়। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসও বেড়েছে। চলমান বৃষ্টি শনিবার রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস আছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়ার অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকা ও তার আশপাশে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধসের শঙ্কা আছে।
এদিকে পাহাড়ধসের শঙ্কায় নগরীর বাটালি হিল, মতিঝর্ণা, মিয়ার পাহাড়, টাংকির পাহাড়সহ বিভিন্ন পাহাড় ও পাহাড়ের আশপাশের এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় মসজিদ হতেও সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়। এতে পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসরতদের দ্রুত নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত বাসিন্দারা সরছেন এমন খবর পাওয়া যায়নি।
বাটালি হিল ও মতিঝর্ণা এলাকায় অবস্থিত পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনকে পাহাড়ধস ও অতিবৃষ্টির বিষয়ে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয় মসজিদ থেকেও সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া চান্দগাঁও সার্কেল ভূমি অফিসের আওতাধীন মিয়ার পাহাড় ও টাংকির পাহাড় এলাকায়ও অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কাথাকায় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির হিসেবে, চট্টগ্রামের ২৬টি পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে ৬ হাজার ৫শ ৫৮টি পরিবারের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। এর মধ্যে ১৬টি পাহাড় সরকারি সংস্থার। বাকি ১০টি পাহাড় ব্যক্তি মালিকানাধীন। ২০০৭ সালের ১১ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসে ১২৭ জন মারা যাওয়ার পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে অগ্রসর হওয়ায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।