সুপ্রভাত ডেস্ক »
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি মানবিক ও সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং দেশ থেকে নেতিবাচক, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি চিরতরে নির্মূল করাই বিজয় দিবসের প্রত্যয়।
তিনি গতকাল সকালে রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) আয়োজিত ‘বিজয়ের ৫২ বছর’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন। ডিএফপি’র মহাপরিচালক স. ম. গোলাম কিবরিয়ার সভাপতিত্বে অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমেদ, বিটিভি’র মহাপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ এবং গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. নিজামূল কবীর আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। খবর বাসসের।
জাতিগত উন্নয়নের জন্য শুধুমাত্র বস্তুগত নয় মানুষের আত্মিক উন্নয়নও অত্যন্ত প্রয়োজন উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিকভাবে এখন আর দরিদ্র নই তবু অনেকের চেয়ে পিছিয়ে। কিন্তু সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন, মূল্যবোধে আমরা অনেকের চেয়ে এগিয়ে। পাশাপশি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একটি সামাজিক রাষ্ট্র গঠন করার লক্ষ্যেই বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা চালু করেছেন। এভাবে দেশকে আমরা একটি মানবিক, সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চাই, যেখানে সমস্ত আর্ত-পীড়িত, দরিদ্রদের দায়িত্ব রাষ্ট্র গ্রহণ করবে।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ সমস্ত প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে। এখন জিডিপিতে আমরা বিশ্বের ৩৫তম আর পিপিপিতে ৩১তম অর্থনীতির দেশ। ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ২৫ কিম্বা ২৭তম অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হবে। এই উন্নয়ন অগ্রগতি আমরা আরো বহুদূর এগিয়ে নিতে পারতাম যদি দেশে ধ্বংসাত্মক, নেতিবাচক, গুজব ছড়ানোর রাজনীতি না থাকতো, কারণ এগুলো দেশের অগ্রগতিকে শ্লথ করেছে। আজকে রাজনীতির নামে মানুষ, গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানো হচ্ছে, ট্রেন লাইন কেটে ফেলা হচ্ছে, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এগুলো কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ড নয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’
হাছান মাহমুদ বলেন, রাজনীতির নামে এই সন্ত্রাস আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং করছে। সুতরাং দেশকে যদি স্বপ্নের ঠিকানায় নিয়ে যেতে হয় তাহলে রাজনীতির নামে এই সন্ত্রাস চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। আমরা সেটি বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। সুতরাং আজকে (শনিবার) বিজয় দিবসে আমাদের প্রত্যেকের শপথ হওয়া প্রয়োজন এই নেতিবাচক, ধ্বংসাত্মক রাজনীতিকে চিরতরে দেশ থেকে নির্মূল করতে হবে।
অনুষ্ঠানে শুরুতে ডিএফপি নির্মিত ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ গীতিনাট্য চলচ্ছবি প্রদর্শন এবং আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এর আগে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুরনো ভবনের দু’টি তলা সংস্কার করে একটি স্যুটিং ফ্লোর এবং ভবনের সামনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা ভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।
রাজনীতির নামে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে তথ্যমন্ত্রী গতকাল দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
‘মিডিয়া ফর ডেভলপমেন্ট এন্ড পিস’ সংগঠনের ব্যানারে ‘রাজনীতির নামে জ্বালাও-পোড়াও নাশকতা বন্ধ করো, নির্বাচনই সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ’ শীর্ষক এ মানববন্ধনে জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, পত্রিকার সম্পাদকবৃন্দের মধ্যে হেমায়েত উদ্দীন, হেদায়েত উল্লাহ প্রমুখ অংশ নেন।
তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের ধন্যবাদ জানাই যে, আপনারা আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, রাস্তায় নেমেছেন। বিএনপি-জামায়াত হরতাল, অবরোধ, সমাবেশের নামে একজন পুলিশ সদস্যকে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে, ড্রাইভার-হেলপারকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সাংবাদিকদেরকে পিটিয়েছে, যানবাহন জ্বালিয়ে দিয়েছে, পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, সেগুলো কোনো মুভির নৃশংসতম দৃশ্যপটকেও হার মানিয়েছে। এগুলো রাজনীতি তো নয়ই, অপরাজনীতি বললেও ভুল হবে। রাজনীতির নামে পৃথিবীর কোথাও এ ধরণের নৃশংসতা হয়নি, যেটি বিএনপি-জামায়াত করছে। এরা দেশের শত্রু, সমাজের শত্রু, রাষ্ট্রের শত্রু। আমাদের সবাইকে এদের প্রতিহত করতে হবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, আজকেও হচ্ছে এবং এই ষড়যন্ত্রের সাথে দেশি-বিদেশি চক্র যুক্ত আছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্র উপড়ে ফেলে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সমস্ত ষড়যন্ত্রকে উপড়ে ফেলে আজকে দেশে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয়েছে, উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে দেশে একটি সুন্দর নির্বাচন আমরা উপহার দিতে পারবো।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিক ভাই-বোনদের অনুরোধ জানাবো আপনারা জনগণের পাশে আগেও ছিলেন, এখনো আছেন, আজকে যেভাবে মুখ খুলেছেন, ভবিষ্যতেও এমনই থাকবেন। আর যারা জনগণ ও গাড়ি-ঘোড়ার ওপর হামলা চালায়, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে, তাদেরকে খুঁজে বের করে সমূলে উৎপাটন না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।’