সাতকানিয়ায় হাতিয়ার খাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন
নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতকানিয়া
সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মির্জারখীল সনেরহাট এলাকায় হাতিয়ারখালের উপর নবনির্মিত সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সোনাকানিয়া ও সদর ইউনিয়নের যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষ।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে সেতুর পশ্চিম পাশে মির্জারখীল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়কের সংযোগ স্থলের মাটি ধসে খালে বিলীন হয়ে গেলে স্থানীয় মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে বালু খেকোরা অবৈধভাবে সেতুর উভয় পাশ থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। যার ফলে নবনির্মিত সেতু ও সড়ক উদ্বোধনের আগেই সংযোগ সড়ক ধসে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই সেতুটি ভেঙ্গে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় লোকজন জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতা বশির আহমদ চৌধুরী অবৈধভারে ডলু নদী ও হাতিয়ারখাল থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। অবৈধভারে বালু উত্তোলন করায় হাতিয়ারকুল ও মির্জারখীল এলাকায় খালের দু’পাশে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। এতে অনেকের ঘরবাড়ি নদী ও খালে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে ও সেতু রক্ষায় এলাকাবাসী একাধিকবার মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা করলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বালু খেকোরা। শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাতিয়ার খালের উপর নবনির্মিত সেতুর পশ্চিম পাশে সংযোগ সড়কের মাটি ধসে গেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ধসে যাওয়া স্থানের উভয় পাশে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।
সোনাকানিয়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আহমদ কবির ভেট্টা বলেন, কিছু লোক প্রভাব কাটিয়ে ডলু ও হাতিয়ার খাল থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে দীর্ঘদিন ধরে। সেতুর উভয় পাশ থেকে বালু উত্তোলনের কারণে আজ সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। খাল থেকে স্থায়ীভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে বর্ষা মৌসুমে হয়তো সেতুটিও ভেঙে যেতে পারে।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রচার সম্পাদক সেলিম চৌধুরী জানান, প্রভাব খাটিয়ে কিছু লোক খালের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ডলু ও হাতিয়ারখালের তীর ভেঙ্গে অনেক মানুষের বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বালু খেকোরা আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলাও করেছেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে বার বার অবহিত করার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার ফলে আজ সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে পড়ার মত ঘটনা ঘটেছে। যারা অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও হুমকির মুখে নবনির্মিত সেতুটি রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এলাকার মানুষের সুবিধার্তে অনেক কষ্ট করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করে হাতিয়ার খালের উপর সেতু ও মির্জাখীল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক নির্মাণের প্রকল্পটি পেয়েছিলাম। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ ও সড়কটি উদ্বোধনের আগেই ব্রিজের সংযোগ সড়ক ধসে পড়েছে। ড্রেজার মেশিন বসিয়ে খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে আজ এ দশা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতা বশির আহমদ চৌধুরী বলেন, ইজারা নিয়ে ব্রিজের ১ হাজার ফুট নিচে থেকে বালু উত্তোলন করেছি। ব্রিজের সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ার সাথে বালু উত্তোলনের কোন যোগসূত্র নেই। সংযোগ ব্রিজের পাশ থেকে বালু উত্তোলনে আমার নাম কেন আসবে?
সাতকানিয়া উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ সরওয়ার হোসেন বলেন, হাতিয়ারখালের সেতুর সংযোগ সড়কের কিছু অংশ ধসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সরেজমিনে সড়কটি পরিদর্শন করে মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হবে।