কোভিডÑ১৯ মহামারি থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশ্বের মানুষ যখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেল যে, ধনী দেশগুলি তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই ভাইরাসের টিকা মজুদ করছে। ধনী দেশগুলি যারা বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ তারা সামগ্রিক টিকার ৫৩ শতাংশ প্রাপ্তির জন্য ব্যবস্থাদি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে। পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স নামের একটি জোট সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বের ৭০টি গরিব দেশের প্রতি ১০ জনের ৯জনই আগামী বছর করোনা ভাইরাসের টিকা নাও পেতে পারে। তারা বলছে, বেশির ভাগ টিকা নিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমের ধনী দেশগুলি। উদাহরণ হিসাবে একটি জাতীয় পত্রিকা তথ্য দিয়েছে, কানাডা এত অধিকসংখ্যক টিকা কিনছে যে, প্রত্যেককে ৫ ডোজ করে টিকা দেওয়া যাবে। ধনী দেশগুলির টিকা মজুদের কারণে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এর ফলে টিকার দাম বেড়ে যেতে পারে যা বিশ্বের অন্য দেশগুলির জন্য প্রাপ্তি দুরূহ হয়ে পড়বে। কয়েকটি দেশ এবং কিছু ওষুধ কোম্পানি করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার ও এর প্রয়োগে সাফল্যের কারণে বিশ্বের মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের মানুষও অধীর আগ্রহে টিকা প্রাপ্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। করোনা ভাইরাস এর মধ্যেই কেড়ে নিয়েছে বিশ্বের প্রায় ১৬ লাখ মানুষের প্রাণ। পৌনে ৭ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই ভাইরাসে। বাংলাদেশেরও প্রায় ৭ হাজার মানুষ ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। আমরা মনে করি, করোনা ভাইরাসের টিকা পাওয়া ধনীÑগরিব সকল রাষ্ট্রের সমান অধিকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ নভেম্বর জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্পেন সরকার কর্তৃক আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে বলেছেন, ‘সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়, তিনি কোভিড মহামারি থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘ইতিহাস প্রমাণ করে যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থেকে যে কোনো বিচ্যুতি মানবজাতির জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসবে’। বিশ্বের সকল মানুষের জীবন নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতি জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্ব দেবে এবং সকলের সুরক্ষা একসাথে নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আসছে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ডÑঅ্যাস্ট্রোজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম চালান বাংলাদেশে আসবে। তিন কোটি ডোজ টিকা এই ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ নিয়ে আসছে। মহামারি মোকাবেলায় যারা সামনে থেকে কাজ করেছেন তাদের বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়া হবে মর্মে সরকার আগেই ঘোষণা করেছে। এছাড়া গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন্স (গ্যাভি) বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। ভ্যাকসিন কিনতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রায় ৭৩৬ কোটি টাকা দিয়েছে। আমরা আশা করি, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সকলের জন্য টিকা সংগ্রহ করতে সরকার দ্রুত প্রচেষ্টা চালাবে। সেই সাথে এই বিপুল সংখ্যক টিকা যথাযথ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে সকল ব্যবস্থাদি সম্পন্ন করতে হবে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে। স্বাস্থ্যসহকারীদের কর্মবিরতি এ ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করবে। আমরা চাই এই বিষয়ের একটি সন্তোষজনক সমাধান হোক। টিকা দানের এই বিপুল প্রশাসনিক সক্ষমতার দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা চাই, বিশ্বের সকল মানুষ টিকা পাবে, সকলের সুরক্ষা থাকলে বিশ্বের সকল মানুষ নিরাপদ থাকবে। ধনী দেশগুলিকে এই সরল মানবিক সত্যটি উপলব্ধি করতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়