সুপ্রভাত ডেস্ক
বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট (আইডিইউ) অনুযায়ী, ভারত প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ বৈশ্বিক পরিবেশের পটভূমিতে স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করে চলেছে। এই হালনাগাদ অনুসারে, উল্লেখযোগ্য বৈশ্বিক বাধা থাকা সত্ত্বেও, ভারত ‘২২-২৩’ অর্থবছরে ৭.২% হারে দ্রুত বর্ধনশীল মুখ্য অর্থনীতিগুলোর মাঝে একটি ছিল। আইডিইউ-এর মতে, জি২০ দেশসমূহের মধ্যে ভারতের বৃদ্ধির হার ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং উদীয়মান বাজার অর্থনীতির গড়পড়তা বৃদ্ধির প্রায় দ্বিগুণ।
‘এই স্থিতিস্থাপকতা, ব্যাপক অভ্যন্তরীণ চাহিদা, শক্তিশালী জন-অবকাঠামোমূলক বিনিয়োগ ও একটি শক্তিশালী আর্থিক খাত কর্তৃক প্রভাবিত হয়েছিল। ‘২৩-২৪’ অর্থবছরের প্রথমত্রৈমাসিকে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১৫.৮% হয়েছে, যা ‘২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ছিল ১৩.৩%,’ জানিয়েছে আইডিইউ।
২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত, আইডিইউ হলো ভারতীয় অর্থনীতির ওপর বিশ্বব্যাংকের ফ্ল্যাগশিপ অর্ধ-বার্ষিক প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনটিতে আশা করা হয়েছে, উচ্চ বৈশ্বিক সুদের হার, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও মন্থর বৈশ্বিক চাহিদার কারণে বৈশ্বিক প্রতিকূলতাসমূহ ‘বহাল থাকবে এবং তীব্র হবে।’ ফলে, এই সম্মিলিত কারণসমূহের পটভূমিতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও মধ্যমেয়াদে কমে যেতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্বব্যাংক ‘২৩-২৪’ অর্থবছরের জন্য ভারতের জিডিপি ৬.৩% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রত্যাশিত মধ্যপন্থী অবস্থার সৃষ্টি মূলত প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ বাহ্যিক পরিস্থিতি ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে। যাইহোক, সেবা খাতের কার্যকলাপ ৭.৪% বৃদ্ধি পেয়ে স্থিতিশীল থাকবে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিও ৮.৯% হারে দৃঢ় অবস্থানে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অগাস্টে তানো কৌমে বলেছেন, ‘একটি প্রতিকূল বৈশ্বিক পরিবেশ স্বল্পমেয়াদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে থাকবে”। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘আরও বেশি ব্যক্তিগত বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে এমন সরকারি ব্যয় কমানোর মাধ্যমে ভারতের জন্য বৈশ্বিক সুযোগ দখল করতে আরও অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং এর মাধ্যমে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।’
শিরোনাম মুদ্রাস্ফীতির তীব্র ঊর্ধ্বমুখিতা
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতিকূল আবহাওয়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে দায়ী। গম ও চালের মতো খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে জুলাই মাসে শিরোনাম মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭.৮% হয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের দাম স্বাভাবিক হলে এবং সরকারি পদক্ষেপের ফলে মৌলিক পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি হলে মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘যদিও শিরোনাম মুদ্রাস্ফীতির তীব্রতা সাময়িকভাবে পণ্যের ব্যবহারকে সীমাবদ্ধ করতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা মধ্যপন্থী অবস্থার কৌশল নিতে পারি। সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যক্তিগত বিনিয়োগের জন্য অনুকূল থাকবে,’ বলেছেন বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক এবং এই প্রতিবেদনের মুখ্য লেখক ধ্রুব শর্মা। তিনি এও বলেন, ‘বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনের ভারসাম্য বজায় রাখার কারণে ভারতে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়তে পারে।’
বিশ্বব্যাংক আশা করে যে, আর্থিক একত্রীকরণ ‘২৩-২৪’ অর্থবছরে চলমান থাকবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব ঘাটতি জিডিপি-তে ৬.৪% থেকে ৫.৯% হারে হ্রাস অব্যাহত থাকবে। সরকারি ঋণ জিডিপির ৮৩%-এ স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইডিইউ অনুযায়ী, বাহ্যিক প্রেক্ষাপট থেকে, চলতি হিসাবের ঘাটতি জিডিপির ১.৪%-এ সংকুচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং এটি বিদেশি বিনিয়োগ দ্বারা পর্যাপ্ত অর্থায়ন করা হবে। এটি বৃহৎ বৈদেশিক রিজার্ভ দ্বারাও সমর্থিত হবে।