অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনেকার প্রথম ডোজের টিকা যারা নিয়েছেন তাদের অনেকেই দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে পারেননি টিকা সরবরাহে সংকটের কারণে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ৩ কোটি টিকা দিতে চুক্তিবদ্ধ হলেও সে দেশের করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা রপ্তানি ভারত সরকারের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে। তারা সরবরাহ করেছে ৭০ লাখ টিকা, এক কোটি ৩ লাখ টিকার বাকিটা এসেছে উপহার খাতে। টিকা সরবরাহ বন্ধ থাকায় ১৫ লাখের মতো দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহীতা টিকা নিতে পারছেন না। চট্টগ্রামে এই সংখ্যা সোয়া লাখ। দ্বিতীয় ডোজ টিকার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওযায় তারা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বি সংবাদ মাধ্যমে বলেন, সরকার দ্রুত ১ কোটি অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা সংগ্রহে চেষ্টা করছে, চট্টগ্রামে যাঁদের প্রথম ডোজ গ্রহণের ৩ মাস হয়ে যাবে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্টক থেকে অল্প কিছু টিকা দেওয়া যাবে। ৩ মাস পার হয়ে গেলেও টিকা আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের টিকা দেওয়া হবে।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদা মালিক বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে টিকা আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে, দেশে টিকা উৎপাদনের ব্যাপারেও নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উদ্বৃত্ত থাকা অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা থেকে ৪০ লাখ টিকা চেয়েছে। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সাথে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, দুই একদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। চীনের সিনোফার্ম থেকে আসা ৫ লাখ ডোজ টিকা আগামী সপ্তাহ থেকে দেওয়া শুরু হবে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সম্মুখ সারির যোদ্ধারা এই টিকা পাবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার, জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাদের টিকা দিলে তাড়াতাড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক্সের টিকা এবং রাশিয়া থেকে স্পুৎনিকÑভি টিকা সংগ্রহে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে; শুধু সংগ্রহ নয়, বিপুল জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে, আর দেরি না করেই এ ব্যাপারে টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলির সাথে দ্রুত আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। চীনের সাথে টিকা সংগ্রহ প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার কথাও সম্প্রতি বলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা চীনের ২টি টিকার অনুমোদন দেওয়ার পরই বাংলাদেশ এ ব্যাপারে টিকা পেতে আবেদন করেছে। আমরা আশা করি চীন ও রাশিয়া দ্রুত বাংলাদেশের টিকা আবেদনে সাড়া দেবে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় টিকাকে বিশ্ব পণ্য হিসেবে গণ্য করে মানবজাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সকল দেশ ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।
মানুষ এখন ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরে আসতে শুরু করেছে। যেভাবে তারা বাড়ি গেছেন এবং ফিরে আসছেন তাতে করোনা সংক্রমণ তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যবিদগণ। সরকারের বর্ধিত লকডাউনের সময় জনগণ, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বিধিনিষেধ মান্য করে চলবে, করোনার এই বিপদে স্বাস্থ্যবিধি পালন না করলে আমাদের সংক্রমণ থেকে মুক্তি নেইÑ এটি সচেতনভাবে উপলব্ধি করতে হবে দেশবাসীকে।
মতামত সম্পাদকীয়