#আক্রান্তের হার কমে ৯-১০ শতাংশে : সিভিল সার্জন
#বন্ধ হয়ে গেছে ফিল্ড হাসপাতাল ও চসিক আইসোলেশন সেন্টার
ভূঁইয়া নজরুল :
রোগী না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে করোনাকালে সাড়া জাগানো ফিল্ড হাসপাতাল। এই ফিল্ড হাসপাতালের আলোকে নগরীতে আরো কয়েকটি ফিল্ড হাসপাতাল কিংবা আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠেছে। সেগুলোর কোনোটি বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ হওয়ার পথে। বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার। দুই সপ্তাহ আগে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড হাসপাতালটিতেও কোনো রোগী নেই, এটিও বন্ধ হওয়ার পথে।
করোনা কি শেষ?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় করোনা রোগীদের নিয়ে প্রথম থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রবের সাথে। তিনি বলেন, ‘একসময় আমাদের এখানে রোগীর প্রচ- চাপ ছিল। এখন তা নেমে এসেছে ৪০ থেকে ৪৫ জনে। এই চিত্র কিন্তু শুধু এখন নয়, গত কিছুদিন ধরে তা চলমান এবং একটি স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ এর মোকাবেলা করে শিখে গেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া উপায় নেই। এজন্য হাত ধোঁয়া ও মাস্ক পরার বিষয়টি মেনে চলতে হবে সকলকে।’
চট্টগ্রামে করোনার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে করোনা রোগী শনাক্তের হার ছিল ৯ শতাংশ, এর আগের দিন ২ সেপ্টেম্বর এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ১ সেপ্টেম্বর ছিল ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এছাড়া আগস্টে ছিল ১২ থেকে ১৩ শতাংশ, জুলাইতে ২০ শতাংশের বেশি এবং জুনে ৩০ শতাংশের বেশি ছিল আক্রান্তের হার। আগে যেখানে নমুনার সংখ্যা ১৫০০ এর উপরে ছিল এখন তা কমে হাজারের নিচে নেমে এসেছে।
এবিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বীর সাথে। তিনি বলেন,‘চট্টগ্রামে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। এতে বলা যায় করোনা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নাগরিকরা ঘর থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করেছে এবং গণপরিবহনও চলাচল করছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া বিকল্প নেই।
বিশ্বের অনেক দেশে দ্বিতীয় দফায় আঘাত করে করোনা। আমাদের এখানে সেই শঙ্কা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে শীতের আগ মুহূর্তে আরো একটি আঘাত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা সতর্ক রয়েছি। একইসাথে নাগরিকদেরও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সর্তক থাকতে হবে।’
বন্ধ হয়ে গেছে ফিল্ড হাসপাতাল ও চসিক আইসোলেশসন সেন্টার
আগের মতো রোগীর চাপ নেই। গত সপ্তাহে ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামের ফিল্ড হাসপাতাল। এসময় হাসপাতালটির উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহি ডা. বিদ্যুৎ বড়–য়া বলেন, ‘যেহেতু এখন আর তেমন রোগী নেই তাই আপাতত এর কার্যক্রম বন্ধ করা হলো। তবে চট্টগ্রামবাসীর প্রয়োজনে আবারো ফিল্ড হাসপাতাল তার কার্যক্রম শুরু করতে পারে।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে সিটি কনভেনশন হলে ২৫০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার চালু করে। রোগী না থাকায় দুই সপ্তাহ আগে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এবিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনার রোগী অনেক কমে গেছে। তাই আমরা দুই সপ্তাহ আগে আইসোলেশন সেন্টারটি বন্ধ করে দিয়েছি।’
পতেঙ্গা-ইপিজেড-বন্দর নামে আরো একটি হাসপাতাল পতেঙ্গায় চালু করা হয় করোনাকালে। বর্তমাতে এই হাসপাতালেও কোনো রোগী নেই। রোগী নেই করোনা চিকিৎসায় মনোনীত হাসপাতাল বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালেও। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা ১০০তে নেমে এসেছে।
তবে ব্যাতিক্রমও রয়েছে। পোর্ট কানেকটিং রোডে প্রিন্স অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে গড়ে উঠা করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামে রোগীর চাপ বেশি। অন্য সেন্টারগুলো যেখানে রোগীর অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেখানে এই আইসোলেশনে ২১ জন রোগী রয়েছে। এবিষয়ে করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘আমাদের এখানে ২১ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। নগরী, জেলা ও জেলার বাইরে থেকেও রোগী আসছে আমাদের আইসোলেশন সেন্টারে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। তবে আগস্ট মাস থেকে কমতে থাকে করোনার প্রকোপ। চট্টগ্রামে এপর্যন্ত ১৭ হাজার ৩৬২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।