দোষীদের কোন অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না

রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সুপ্রভাত

ফজলে এলাহী, রাঙামাটি »

‘আইনশৃঙ্খলা কোনোভাবেই অবনতি হতে দেয়া যাবেনা। যারা পরিস্থিতি অবনতি করার চেষ্টা করবে তাদের কোন অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

রাঙামাটিতে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে এক মতবিনিময় সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের এইসব কথা বলেছেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

শনিবার (২১শে সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টাই রাঙামাটি রিজিয়নের প্রান্তিক হলে জেলার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধি দলের সাথে  এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা শেষে গণমাধ্যমকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। কোন অবস্থায় পরিস্থিতি অবনতি করা যাবে না। যারা চেষ্টা করবে তাদের হাত ভেঙ্গে দেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, আমরা সবাই সম্প্রীতি চাই। কোথাও যেনো ছন্দপতন ঘটছে। ছন্দপতনে সবাই একটি শব্দ উচ্চারন করেছেন,সেটি হলো ষড়যন্ত্র। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাহির থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এর পেছনের ষড়যন্ত্রকারিদের চিহ্নিত করা হবে। তদন্ত কমিটি করা হবে, তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা। যারা আশান্ত করার চেষ্টা করবে তাদের কঠোর ভাবে দমন করার কথাও জানান তিনি।

সভায় পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাইনুর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ প্রধান মইনুল ইসলামসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোটেক মামুনুর রশিদ, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির জেলা কমিটির সভাপতি ডাঃ গঙ্গামানিক চাকমা, জাতীয়পার্টি জেলা কমিটির সভাপতি হারুনুর রশীদ মাতব্বর,জামায়াত আমির আব্দুল আলিম, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ চেয়ারম্যান কাজি মজিবুর রহমান,চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়,সাবেক শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, ইসলামী আন্দোলন, পরিবহন মালিক শ্রমিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ বক্তব্য ও পরামর্শ তুলে ধরেন।

অ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পু বলেন, যে তদন্ত কমিটি হবে, সেখানে যাতে ঘটনার মূল আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এভাবে ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমরা শান্তি চাই।

রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোটেক মামুনুর রশিদ বলেন, এই সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য পাহাড়ে এমন সংঘাত সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে। আমাদের মনে হয় এটি বাহির থেকে কেউ ইন্দন দিচ্ছে। সবাইকে সর্তক থাকার অনুরোধও জানান তিনি।

সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির জেলা কমিটির সভাপতি ডাঃ গঙ্গামানিক চাকমা বলেন, গতকালকের বিক্ষোভ মিছিল আমাদের দলীয় কোন লোকজন জড়িত না। এতে আমাদের কেউ অংশ নেয় নি। সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এটি হয়েছে। তবে যারাই করুক তারা পাহাড়ের শান্তি চায় না।

প্রায় দুইঘন্টার এই সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন উপদেষ্টারা। পরে তারা খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং সেখানেও সেখানকার নাগরিকদের সাথে পৃথক আরেকটি মতবিনিময় সভায় যোগ দেয়ার কথা।

এদিকে শুক্রবার দুপুর থেকে জারি হওয়া ১৪৪ ধারা বহাল থাকার পাশাপাশি শুক্রবার রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল থেকে নির্বিচারে গাড়ী ভাংচুর,অগ্নিসংযোগ,চালকদের মারধরের প্রতিবাদে জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অচল হয়ে পড়ে পুরো শহর। ট্রাক বাস মিনিট্রাক মাইক্রো অটোরিক্সা চালক মালিক ঐক্য পরিষদের আহ্বানে ডাকা অনির্দিষ্টকালের এই অবরোধে কার্যত স্থবির ছিলো পুরো শহর। শহরের একমাত্র গণপরিবহন অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ থাকায় থমকে যায় জনজীবন।

অটোরিক্সা চালক সমিতির সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু বলেছেন, আমাদের গাড়ী ভাংচুর,অগ্নিসংযোগ,চালকদের মারধনের ঘটনার প্রতিবাদে এই ধর্মঘট। চালক ও মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা কিভাবে আমরা গাড়ী চালাব। শনিবারও অবরোধ ধর্মঘট চলাকালে সাপছড়ি এলাকায় একটি অটোরিক্সা ভাংচুর করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।