‘দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। একই সাথে ভারতসহ কোন দেশের পণ্য অবৈধ পন্থায় যাতে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সে দিকে নজর রাখতে হবে। মাদকের অভিশাপ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। এছাড়া আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।’
গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৪টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত চোরাচালান নিরোধ আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা, বিভাগীয় আইন-শৃংখলা কমিটির সভা, বিভাগীয় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভা, বিভাগীয় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন টাস্কফোর্স সভা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণের সাথে সমন্বয় সভা, জেলা প্রশাসকগণের সাথে সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান এনডিসি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস পৃথক পৃথক সভাগুলোর আয়োজন করেন। বিগত সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন মো. আরাফাত ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন।
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্র উদ্ধার, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক, চোরাচালান, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি, চুরি-ডাকাতি, জ্বালানী তেল পাচার ও চোরাচালান রোধে টাস্কফোর্স এবং মোবাইল কোর্ট অভিযান আরো জোরদার করা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। সম্প্রতি একটি মহল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে সারাদেশে তৎপর রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন অপরাধের কারণে মামলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মামলার জট কমাতে প্রয়োজনে মাদক ও চোরাচালান মামলাগুলো জেলা ভিত্তিক ভাগ করে স্পেশাল বা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে গেলে দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হতে পারে। সন্ত্রাস, দমন, চুরি-ডাকাতি রোধ ও অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোন ঘটনাকে পুঁজি করে জেলায় কোন ধরনের আইন-শৃংখলার ঘটতে দেয়া হবে না। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশ বিরোধী একটি কুচক্রী মহল কর্তৃক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আঘাত হানার কারণে চিন্তা ছিল। নগরীর সবচেয়ে বড় পূজা মণ্ডপ জেএমসেন হলের অদূরে একটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় জড়িতদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পণ্য পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, চট্টগ্রাম বিআরটিএ দুর্নীতি ও দালাল চক্রের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে ঘুষ না দিলে সেবা মিলেনা। পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা ব্যাংকে টাকা জমা সাপেক্ষে তাদের গাড়ির ডকুমেন্ট হালনাগাদ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়। বিভাগীয় প্রশাসনের এ ধরনের নীতি-নির্ধারণী ও গুরুত্বপূর্ণ সভায় বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক উপস্থিত না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ প্রকাশ করেন তিনি। একই সাথে আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিজিবি ও র্যাব মোতায়েনের দাবি জানান মান্নান।
বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান এনডিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৃথক সভাগুলোতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালহ মোহাম্মদ তানভীর, বিজিবি’র জোনাল কমান্ডার কর্নেল রাশেদ আকবর, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান (চট্টগ্রাম), ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি (বান্দরবান), প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস (খাগড়াছড়ি), মো. মামুনুর রশীদ (কক্সবাজার), মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান (নোয়াখালী), আনোয়ার হোছাইন আখন্দ (লক্ষ্মীপুর), অঞ্জনা খান মজলিশ (চাঁদপুর), মোহাম্মদ মিজানুর রহমান (রাঙামাটি), মোহাম্মদ কামরুল হাসান (কুমিল্লা), মো. মামুনুর রশিদ (কক্সবাজার), আবু সেলিম মাহমুদুল হাসান (ফেনী), হায়াত-উদ-দৌলা (ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া), রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, কোস্টগার্ডের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী শাহ আলম, নৌ-বাহিনীর নির্বাহী কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আকিক আহমদ, আনসার ভিডিপির রেঞ্জ পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী, এনএসআই’র অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী হাওলাদার, এফবিসিসিআই’র প্রতিনিধি মাহফুজুল হক শাহ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পণ্য পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. আবদুল মান্নান, নগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একেএম আলাউদ্দিন, চোরাচালান নিরোধ ট্রাইবুন্যালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট হরিপদ চক্রবর্তী প্রমুখ। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন বিভিন্ন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত পদস্থ কর্মকর্তাগণ ও বিভিন্ন কমিটির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বিজ্ঞপ্তি