সুপ্রভাত ডেস্ক »
দেশ এক ‘বিরাট সংকটে’ পড়েছে, যা থেকে উদ্ধারের ক্ষমতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই বলে মনে করছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি এও মনে করেন, এই সংকট থেকে উদ্ধারে এখন বিএনপিকেই ভূমিকা নিতে হবে।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, “আমি বাস্তবতায় মনে করি, দেশ এক বিরাট সংকটের মধ্যে পড়েছে। এখন নির্ভর করবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাইয়েরা কী করেন?
“এই সংকট থেকে যদি মনে করেন, এই সরকার জাতিকে উদ্ধার করবে… এই সরকারের সেই ক্ষমতাই নাই।”
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশমালা মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে দিয়েছে তা নিয়ে বিএনপি প্রবল আপত্তি তুলেছে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সুপারিশমালাকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।
তিনি বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করেছে। সেখানে যে সকল বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনা আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সকল সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না।”
সুপারিশমলায় সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, ওই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। তবে কখন সেই ভোট হবে তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রবল মতবিরোধ রয়েছে।
জামায়াতসহ আটটি দল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেছে। তারা কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়ে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট দাবি করেছে।
এমন পরিস্থিতির কারণে দেশে সংকট তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, “আমি বলি, আজ সমস্ত দায়িত্ব বিএনপির ওপরে। আমি বিএনপি করি না, বিএনপির সব প্রস্তাব মানিও না, বিএনপি সবচাইতে ভালো দল আমি তাও বলি না…এর চাইতেও ভালো হতে পারে।
“কিন্তু বর্তমান সময়ের জন্য এখন ‘রিলে রেইসের’ কাঠি বিএনপির হাতে। তাদের সেই ভূমিকা পালন করতে পারতে হবে।”
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৫৩তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন মান্না।
দলটির প্রতিষ্ঠাতা আ স ম আবদুর রব অসুস্থ থাকার জন্য অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। তবে তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘এটা নির্বুদ্ধিতা, মূর্খতা’
সভায় অতিথির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের নেতা মান্না বলেন, “অনেকে জিজ্ঞাসা করেন আমাকে, ওরা (জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন) এরকম কাজ করলো কেন?”
তিনি ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালায় ভিন্নমত বা নোট ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করার বিষটিকে বোকামি, নিবুর্দ্ধিতা ও মুর্খতা মনে করেন।
“যদি বুঝতেন তাহলে এটা বদলাবার আগে বিএনপির সাথে কথা বলতেন, আমাদের সাথে কথা বলতেন। কারো সাথে তো কথা বলেন নাই। নিজের নিজের মতো করতে গেছেন…এটা এখন হজম করতে পারবেন।
“যদি তারা মনে করেন একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন করলেই বিএনপি খুশি হয়ে যাবে তা আমার মনে হয় না। সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রধানত বিএনপির।”
‘জামায়াত আন্দোলন আন্দোলন খেলে’
মান্না বলেন, “আমরা চেয়েছি, সিদ্ধান্তগুলো, দ্বিমতগুলো জনগণের কাছে যাক। সরকার যে ‘থু থু ফেলেছে, সেই থু থু চাটবে’ আবার…আমি জানি না। কিন্তু তাদের তো ‘চাটতে’ হবে। না হলে ওনারা এভাবেই যদি করতে চান, বিএনপি যদি না মানে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ‘জামায়াতের মতো আন্দোলন না করার যে কথা মির্জা ফখরুল বলেছেন’, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “জামায়াত তো আবার আন্দোলন আন্দোলনে খেলে। কর্মসূচির নামে সভা করে, বড় কর্মসূচি দেয় না। তারা জানে যে, এই কর্মসূচি মানুষ খাবে না। পিআর লোক বুঝে? বুঝে না। আর সেগুলো নিয়ে কথা বলে বুঝে? বুঝে না।”
‘সরকারকে সমর্থন দিয়ে আমরা প্রতারিত হচ্ছি’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব।
তিনি বলেন, “আমরা সব দলগুলো এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে কী হল? প্রতিদিন আমরা প্রতারিত হচ্ছি।”
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পরে এখন নানা ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে, যে কারণে ঠিক কাজ করেছেন কি না তা ভাবতে হচ্ছে, বলেন তানিয়া রব।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিকে ‘মাথা ঠাণ্ডা’ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “তোমরা দেশের ভালোটা বুঝো, বুঝার চেষ্টা করো। আমাদের সাথে কথা বলে অভিজ্ঞতা নাও এবং সেইভাবে তোমরা পথ তৈরি করো।
“তোমরা নেহায়েত শিশু। আমি মনে করি, তোমাদের বীরত্বের জন্য আমি কৃতিত্ব দিতে চাই। কিন্তু তোমরা এখন যেটা করছো, এই মুহূর্তে যেটা করছো, সেটা ঠিক রাষ্ট্রকে যে কোথায় নিয়ে পৌঁছাবে তা কিন্তু একটা অজানা আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
 
				 
		
















































