দেশে সুশাসনের অভাব রয়েছে

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্মরণসভায় জি এম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক »

‘আমাদের এমন সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে যেখানে সৎ, নিষ্ঠাবান ও মেধাবীরা ঘৃণিত হচ্ছে, লাঞ্চিত হচ্ছে, তারা সমাজে টিকে থাকতে পারছে না, সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। দেশে বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করে, অনিয়ম করে অসৎ মানুষের উত্থান হচ্ছে। দেশে সুশাসনের অভাব রয়েছে। দুষ্টের দমনে শিষ্টের পালনের উল্টো হচ্ছে। দলীয়করণের কারণে একশ্রেণীর মানুষ আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে। ক্ষমতাসীনরা সেই সুযোগে দেশের সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।’

গতকাল নগরীর একটি কনভেনশন হলে আয়োজিত জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও মন্ত্রী, উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্মরণসভা ও মেজবান অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপ-নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সরকারের বিরোধীতা করা প্রত্যেক নাগরিকের অধীকার ও দায়িত্ব। সরকার তৈরি করি। দেশের মালিক সাধারণ জনগণ। সরকারের সমালোচনা ও প্রশংসা করার অধিকার আমাদের থাকতে হবে। কিন্তু এখন কেউ সমালোচনা করতে পারে না। তাকে সরকারবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হচ্ছে। মানুষকে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে। যদি সরকারের ভুলত্রুটির সমালোচনা করতে না পারি, এটি কি ধরনের গণতন্ত্র বুঝতে পারছি না। দেশে জবাবদিহিতাহীন সরকার ব্যবস্থা চলছে। দেশে কারো কোন নিরাপত্তা নেই। সব মানুষ হয়রানি হচ্ছে। দুর্নীতির কেন শেষ নেই। জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয়তা সনদ সংশোধন করতে গেলেই মানুষ হয়রানি হচ্ছে। দেশের মেধাবীরা এখন দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশে আসলে বিমানবন্দরে হয়রানি হচ্ছে। তাদের কোন নিরাপত্তা নেই। যারা কবরে চলে যাচ্ছে তারা অন্তত এই দেশের চেয়েও ভালো আছে। দেশটি এখন দোজখের সমতূল্য।

তিনি আরো বলেন, দেশের নিত্যপণ্য, জ্বালানি, বাজার সবস্থানে বৃদ্ধি। সরকারের এই দিকে কোন চিন্তা নেই। টিসিবির লাইনে দুই-আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোন লোক খাবার পাচ্ছে না।

মেগাপ্রজেক্ট নিয়ে তিনি বলেন, দেশের সবগুলো প্রজেক্টে বিপুল অঙ্কের দুর্নীতি জড়িয়ে আছে। যখন দেশে মেগা প্রজেক্ট হয়, তখন সুইচ ব্যাংকে ১ বছরে ৪ লাখ কোটি জমা হয়। এই টাকা কোথায় থেকে আসে? সাধারণ ব্যবসা থেকে তো আর আসে না।

বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাদের জিডিপি হার নাকি খুব ভালো। জিডিপি হার যতই ভালো হোক, প্রজেক্টগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই করে যেন সঠিকভাবে চালানো হয়। সবপ্রজেক্ট লুস প্রজেক্ট। এগুলোর দেনার ভার বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বহন করতে হবে। এবং শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দেওলিয়া হবে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। দেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সব কিছু বাক্য বিনিময় করেই শেষ করা হচ্ছে। এ কারণে এখনও মিয়ানমারকে সমস্যা সমাধানে বাধ্য করা যাচ্ছে না। মিয়ানমার দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে যখন ইচ্ছে গোলাগুলি ও বোমা ফেলছে। দেখে মনে হচ্ছে আমাদের দেশের শক্তি বা নীতি বলে কিছু নেই।

উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দেশের মানুষের হৃদয়ে এখনও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রয়েছেন। মানুষ এরশাদকেই চায়। দেশের রাজনীতিতে এরশাদের বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে। দেশের যত উন্নয়ন হয়েছে বেশিরভাগই এরশাদের আমলে হয়েছে। এরশাদের আমলে উন্নয়ন বাজেট হতো ৮ হাজার কোটি টাকা, আর এখন বাজেট হয় দু’লক্ষ কোটি টাকা তারপরও কাজ তখন কি হয়েছে আর এখন কি হচ্ছে জনগণ দেখবে। দেশের হাসপাতাল স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে পল্লী বন্ধু এরশাদের আমলে। জাতীয় পার্টি গৌরবোজ্জ্বল রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি নিয়ে আর কেউ খেলতে পারবে না। জাতীয় পার্টি এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী। মানুষ এখন বুঝতে পারছে ইতিহাসে কারা তাদের পাশে ছিল। নির্বাচনে জনগণ জবাব দিবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, সোলায়মান আলম শেঠ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহীম, প্রয়াত জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু’র সহধর্মিণী ড. মেহে জেবুন্নেসা রহমান (টুম্পা) ও সুযোগ্য সন্তান আশিক আহমেদ প্রমুখ।