আইইডিসিআরের গবেষণা
সুপ্রভাত ডেস্ক >
দেশে সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট) বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশে আরেকটি অজানা ভ্যারিয়েন্টও শনাক্ত হয়েছে। খবর বাংলাট্রিবিউন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডিএসএইচআই) করোনাভাইরাসের ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছে। জিনোম সিকোয়েন্সিং-এ এসব তথ্য জানা গেছে। জিনোম সিকোয়েন্সিং’র ফলাফলে দেখা গেছে, ৫০টি নমুনার মধ্যে ৪০টি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অর্থাৎ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, যেটা বি.১.৬১৭.২ নামে পরিচিত। সাউথ আফ্রিকান বা বিটা ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে আটটি (১৬ শতাংশ), একটি সার্কুলেটিং ও আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে আন-আডিন্টিফাইড ( বি.১.১.৩১৮) ভ্যারিয়েন্ট। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত রোগীদের মধ্যে ১৪ জন রোগীর ( ৩৫ শতাংশ) বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমণের অথবা বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কোনও ইতিহাস নেই। আর এ কারণেই বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টর কমিউনিটি সংক্রমণ বিদ্যমান বলে আইইডিসিআর’র ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। যাদের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে তিনজনের (৭ শতাংশ) বয়স ১০ বছরের নিচে, সাতজনের (১৮ শতাংশ) বয়স ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, দশজনের (২৫ শতাংশ) বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, আটজনের (২০ শতাংশ) বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, আটজনের (২০ শতাংশ) বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর এবং চারজনের (১০ শতাংশ) বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। তাদের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে (ভারতীয়) আক্রান্তদের মধ্যে আটজনের ভারতে ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে এবং ১৮ জনের বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ইতিহাস রয়েছে। অপর ১৪ জন রোগীর বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমণের অথবা বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার কোনও ইতিহাস পাওয়া যায়নি জানিয়ে আইইডিসিআর জানায়, অর্থাৎ বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তথা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ বিদ্যমান।আইইডিসিআর জানায়, আইইডিসিআর উচ্চ সংক্রমিত এলাকাগুলোতে আক্রান্ত রোগীর কেস ইনভেস্টিগেশন, কন্টাক্ট ট্রেসিং এবং সন্দেহজনক রোগীদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে। তার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে সংগৃহীত ১৬টি নমুনার মধ্যে ১৫, গোপালগঞ্জ জেলা থেকে সংগৃহীত সাত নমুনার সবগুলোতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। খুলনা শহর থেকে সংগ্রহ করা তিনটি নমুনার মধ্যে সবগুলোতে আর ঢাকা শহরের চারটি নমুনার মধ্যে দুইটিতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় আসা সাতজনের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও ভারত থেকে আসা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বিভিন্ন জেলার আরও তিন অধিবাসী চুয়াডাঙ্গা ও খুলনায় চিকিৎসাধীন আছেন। দেশে গত ৮ মে প্রথম ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এদিকে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মঙ্গলবার সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রাণঘাতী এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা অত্যধিক। এমনকি এটি টিকার সুরক্ষাকবচকেও ভাঙার ক্ষমতা রাখে। সংস্থাটি বলছে, ‘এটা নিশ্চিত যে, এই প্রকারভেদটির সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। এটি জনস্বাস্থ্যকে বড় রকমের ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।’ বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ অন্যান্য জেলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে আইইডিসিআর এ অবস্থায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ অন্যান্য ভেরিয়েন্টের বিস্তার রোধে সঠিকভাবে মাস্ক পরার পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যেমন বিনা প্রয়োজনে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা, জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে।