ডেস্ক রিপোর্ট »
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ১০২টি উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে আছে ৯৫টি ইনব্রিড ও ৭টি হাইব্রিড।
বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট উচ্চ ফলনশীল ধানের যে জাত উদ্ভাবন করেছে যার মধ্যে একটি ধান হলো ব্রি-১০৫। এই ধান স্বল্প পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন একটি পুষ্টিকর উচ্চফলনশীল জাত। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ চাল।
ডায়াবেটিস রোগীদের সাধারণত রক্তের গ্লুকোজ কমাতে ভাতের বদলে রুটি খেতে বলেন চিকিৎসকরা। এ বিষয়টি মেনে চলা অনেকের পক্ষেই কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের জন্য দারুণ একটি সমাধান হতে পারে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের (জিআই) ধান।
অতিরিক্ত ছাটাইকৃত চাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার আমাদের দেশে মাড় ফেলে ভাত খাওয়ার কারণে এমনি পুষ্টি কম পাওয়া যায়। এ অবস্থায় ব্রি ধান ১০৫ বেশ আগ্রহ তৈরি করেছে কারণ এটিতে পুষ্টিমান যেমন আছে তেমনি জিআই অনেক কম।
সাধারণত খাদ্যে জিআই ৫৫ বা আর নীচে থাকলে এটি কম জিআই সম্পন্ন বলা হয়ে থাকে। ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষণায় ব্রি ধান ১০৫-এ জিআই এই মাত্রার নিচে পাওয়া গেছে।
অবশ্য বাংলাদেশে লো জিআই-এর ধান উদ্ভাবন এবারই প্রথম নয়। এর আগেও লো জিআই সমৃদ্ধ তিনটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন এবারের ধানটি উচ্চ ফলনশীল জাতের এবং হেক্টরপ্রতি এর সম্ভাব্য উৎপাদন সাত টনের বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী ব্রি ধান ১০৫ থেকে পাওয়া চালে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ তুলনামূলক কম এবং সে কারণেই একে ‘ডায়াবেটিক ধান’ বলা হচ্ছে।
ভাতের চেয়ে ভালো খাবার হয় না আর সে কারণেই ভাতটাও যাতে ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা খেতে পারেন সে জন্য ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের এই প্রচেষ্টা।
ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের শস্যমান ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলছেন, ধান,গম বা ভূট্টাসহ যে কোন খাবারে আলফা অ্যামাইলেজ ইনহিবিটর যত বেশি থাকবে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তত কম হবে, অর্থাৎ ঐসব খাদ্য পরিমিত পরিমান খাওয়ার পরও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়।
ব্রি ধান ১০৫ জাতের ধান থেকে তৈরী ভাত, রুটি, কেক, বিস্কুট এবং নুডুলসসহ সব ধরণের পরিমিত পরিমাণ খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম।
ব্রি ১০৫ ধানটির গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৭ দশমিক ৬ টন হলেও উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে সাড়ে আট টন পর্যন্ত ফলন বাড়তে পারে।
কিছুটা চিকন ও লম্বা জাতের এ ধানটি বীজ বপন থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত ১৪৮ দিন সময় লাগতে পারে। যেখানেই বোরো মৌসুমের অনুকূল পরিবেশ পাওয়া যাবে সেখানেই এই ধানটি চাষ করা যাবে।
ব্রি বলছে এ ধানটির (ব্রি ধান ১০৫) শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো এর পাতা সবুজ ও খাড়া ডিগ পাতা আর দানা মাঝারি লম্বা ও চিকন। তবে এ ধানটি পেকে যাওয়ার পরেও এর গাছ সবুজ থাকে। ধানটিতে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭ শতাংশ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কোন খাবারগুলো ভালো তা খুঁজে বের করা সংক্রান্ত গবেষণায় ১৯৮০ সালে ড. ডেভিড জে জেনকিন্স এবং তার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীরা গ্লাইসেমিক সূচক তৈরি করেন।
জিআই ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত স্কেলে খাবারের র্যাঙ্ক তৈরি করে। স্কোরগুলো রক্তের চিনির মাত্রায় খাবারের প্রভাব নির্দেশ করে। গ্লাইসেমিক সূচক কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারকে ৩টি সাধারণ ভাগে বিভক্ত করে। এগুলো হচ্ছে-উচ্চ (৭০ ও তার বেশি), মাঝারি (৫৬ থেকে ৬৯) এবং নিম্ন (৫৫ ও এর নিচে)।
ব্রি ধান ১০৫ এর জিআই স্কোর ৫৫। এ জাতের ধান থেকে পাওয়া চালে রান্না করা ভাত ঝরঝরে ও সুস্বাদু হয়।
এ বছরই প্রথম দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এই ধানের পরীক্ষামূলক চাষ হয়েছে। ফলনও বাম্পার হয়েছে। তাই এই ধান ভবিষ্যতে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
ব্রি ১০৫ একটি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। যার বীজ কৃষক নিজেরাই উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলে কৃষককে বীজের জন্য অন্য দেশ বা কোনও কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না- বীজ স্বত্ব কৃষকেরই থাকবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা, বাংলা ট্রিবিউন ও ডেইলি স্টার