খন রঞ্জন রায় »
গর্ব ও গৌরবের সাথে বলতে হয়, রোগবিস্তার যখন ব্যাপকতা লাভ করেছে বিধ্বংসী ছোঁয়াছুঁয়ির কারণ ও অজুহাতে চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হাত গুটিয়ে ফেলেছিল, তখন এই বিআইটিআইডি নিজস্ব উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় শুরু করে হাসপাতাল সেবা কার্যক্রম। সরকারের অন্য সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসমূহের ফাঁকা বিছানাতে করোনা রোগীদের ঠাঁই হয়নি। দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে সামান্যতম অক্সিজেন প্রাপ্তির আকাক্সক্ষা প্রত্যাশা করে বিফল হয়েছে। রাস্তাঘাট, অ্যাম্বুলেন্স, বাসা-অফিস, ফুটপাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। আলিঙ্গন করেছে অসময়ের আপত্তিকর মৃত্যুস্বাদকে। এখানে ধনী-গরিব, বিত্তহীন, সম্পদশালী, পদস্ত, নি¤œপদ, রাজনৈতিক, সমাজকর্মী, আমলা, সেনা, পুলিশ সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে মোকাবিলা করতে হয়েছে অভাবনীয় ভয়ঙ্কর বিপর্যস্ত এই পরিস্থিতি। সেই সংকটময় মহাবিপর্যয়ের বিভিষীকাময় সময়ে বিআইটিআইডি অতি আন্তরিকভাবে নিষ্ঠার সাথে চালু করে স্বাধীন স্বতন্ত্র করোনা হাসপাতাল। পাঠকদের জানানো প্রয়োজন যে এইটি ছিল পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। ফিল্ড হাসপাতালের যে চিন্তাধারা বা কনসেপ্ট তা কিন্তু নয়।
বাংলাদেশের অন্য কোন হাসপাতালে অধ্যাপক পদমর্যাদার চিকিৎসকগণ রোস্টার ডিউটির মাধ্যমে সকাল-বিকাল-রাত্রিকালীন ২৪ ঘন্টা রোগীর শয্যাপাশে স্বশরীরে উপস্থিত থাকার নজির এখানেই। বিরল ব্যতিক্রম বৈ কি? সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও নিরীহ নিরোপায় করোনা রোগীর তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে কারো মুখাপেক্ষী না থেকে সম্পূর্ণ নিজস্ব চিন্তা চেতনা, ধ্যাণধারণার মানবিকতার বহিঃপ্রকাশে সর্বাত্তক সৃষ্টিশীল দৃঢ় ভূমিকা পালন করা হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানের কর্মপযোগী মৃদুভাষী উদার নিরহংকারী মানবিক মনের অধিকারী নির্ভরযোগ্য মেধাবী পরিচালক খ্যাতিমান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আবুল হাসান চৌধুরীর স্বার্থহীন দ্ব্যার্থহীন নিপুণ নেতৃত্বে। সৌভাগ্যের বিষয় পরিচালকের চারপাশ ঘিরে আষ্টেপৃষ্টে লেপ্টেছিলেন বিশেষ গুণসম্পন্ন নির্ভয়ের নির্ভিক ব্যতিক্রমী চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টসহ কিছু স্বাস্থ্যকর্মী ।
করোনাকে করুণা দেখানোর অভিজ্ঞতা না থাকলেও দ্রুততম সময়ে নিজেদের প্রস্তুত করে মানুষের কল্যাণে, মঙ্গলে প্রয়োজনে আত্মোৎসেের্গর মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাঁরা। সারা দেশের করোনা রোগীর পরীক্ষার মুখপাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মানবিক এক চিকিৎসক ডা. শাকিল আহম্মদ। ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা তদারকি আর সমন্বয়ের আবেগি দায়িত্ব আন্তরিকে পালন করছেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রণব বড়–য়া ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ। চিকিৎসা নিরাপত্তা সরঞ্জাম অপ্রতুলতাকে উপেক্ষা করে মানবকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গের মানসিকতা নিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মুখোমুখি হয়ে নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরীক্ষাগারের পিসিআর মেশিনের প্রতিটি মুহুর্তকে সাশ্রয়ী হিসাবে দিনরাত নিরলস শ্রম দিয়েছেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের এক ঝাঁক উদ্দ্যোমী তরুণ।
তখনো দেশের ঢাকা আইইডিসিআর, চট্টগ্রামে বিআইটিআইডি সবেধন নীলমনি, এই দুইখানই সারাদেশের করোনা আক্রান্ত রোগীর আশার প্রদীপ, ভরসারস্থল, নির্ভরতার প্রতীক। বলা যায় এখনো। মাঝখানে যাঁদের অঙ্কুরোদ্গম হয়েছে। তাঁদের কা-কারখানার সমসাময়িক ইতিহাসতো আর নতুন করে বুঝানোর কিছু নেই।
তবে মুখরোচক আকাক্সিক্ষত এইসব কলুষিত খবরে সরগরম থাকা প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার কাটতি বেশ ভালই হয়েছে। জনগণও বুঝতে পেরেছে, শিখেছে, বিপদের বন্ধু কারা, কোথায়, কেন, কেমন করে, কাদের দ্বারা, নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
ইতিমধ্যে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। রাখতে পেরেছে। জানিয়ে দিয়েছে, কিভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নির্ভূল নিরাপদ পথ উন্মোক্ত করতে হয়। জনগণের কাছে আতঙ্ক না হয়ে আস্থা অর্জনের উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে হয়।
মানুষের জীবনের অপরিহার্য রক্ষাকবচ হিসাবে নিরঙ্কুশ আনন্দঘন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার মূলমন্ত্র খুঁজে নিতে হয়। রাতারাতি গজিয়ে ওঠা অস্বাভাবিক এইসব পরীক্ষাগার ও প্রতিষ্ঠানের ঠাসাঠাসি ধাক্কাধাক্কির তোয়াক্কা না করে নিঃস্বার্থভাবে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে।
লেখক : উন্নয়নকর্মী