কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে চাপ বেড়েছে । ১৪ জুলাই থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। ১৮ জুলাই থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা, কারফিউ জারি ও সরকারি সাধারণ ছুটির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বেশি মাত্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। বিশেষ করে আমদানি, রপ্তানি, ব্যাংকিং সেবা, ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ ছিল। শিল্পের চাকাও বন্ধ হয়ে যায়। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ কোটি ডলার বা ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ হিসাবে প্রথম ৭ দিনে গড়ে ৭৭ হাজার থেকে ৮৩ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল হয়নি। ফলে ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়ছে।
প্রবাসীদের একটি অংশ ইতোমধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর ব্যাপারে জনমত গড়ে তুলছে। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এরইমধ্যে রপ্তানি আয়ে বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে এর নেতিবাচক প্রভাবের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। ফলে বৈদেশিক খাতে চাপ বেড়ে ডলারের দাম আরও বেড়ে টাকার মান কমে যাওয়ার শঙ্কা আছে। ছাত্রদের ওপর সরকারের গুলি বর্ষণের কারণেই প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত হয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চলছে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে প্রবাসীরা যেন দেশে বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না পাঠায়। এটিও দেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রচারণায় ‘কান’ না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্দোলনের কারণে ইতোমধ্যে পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আইএমএফের শর্তের কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এসব মিলে অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়বে।
আমরা সকল মহলকে অনুরোধ করব পরিস্থিতিকে দ্রুত স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা যেন অব্যাহত থাকে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এমনিতেই নাজুক অবস্থায় আছে। দু বছরেরও অধিক সময় ধরে কভিড মহামারীর অভিঘাত এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও গভীর সংকটে নিপতিত হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্র আন্দোলন বেশিদিন স্থায়ী হলে অর্থনীতির গতি প্রবলভাবে ব্যহত হবে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষেরা পড়ব নিদারুণ কষ্টে। তাই সব পক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে সংকট উত্তরণের চেষ্টা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করি।