নিজস্ব প্রতিবেদক »
অর্থবাজেট কেমন হবে তা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সদস্যদের সঙ্গে গতকাল আলোচনায় বসেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। আলোচনায় ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা নানা ধরনের হয়রানির প্রসঙ্গ তুলে আনেন। আলোচনার উদ্দেশ্যের সাথে বিষয়বস্তুর মিল না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে প্রতিবছর বাজেটের সময় আপনাদের কাছে আসি, কেন? আমাদের কী বাজেট প্রণয়নের জন্য যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি নাই? জ্ঞান-বুদ্ধি যথেষ্ট আছে। সেটি যেন আপনাদের সহায়তা করে, আপনাদের যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না হয়, আপনাদের সুবিধার জন্য আমরা আসি। কিন্তু এ বাজেট আলোচনায় যখন আপনারা অধিকাংশ সময়ে ইনডিভিজ্যুালের ক্ষুদ্র সমস্যাগুলো নিয়ে আসেন, তখন সেটা বাজেট আলোচনা থাকে না। এমন ঢালাওভাবে নিয়ে আসেন, সেটা আমাদের খুবই বিব্রতকর করে। আপনাদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, প্রমাণযোগ্য ডকুমেন্টসহ আমাদের কাছে অভিযোগ আনেন। তারপর দেখেন, অ্যাকশন নিই কি নিই না।
বৃহস্পতিবার হোটেল আগ্রাবাদের কর্ণফুলী হলে সিএমসিসিআই-এর উদ্যোগে এ প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা ২০২৩-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়।
সভার শুরুতে সিএমসিসিআই-এর সভাপতি খলিলুর রহমান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় তিনি আমদানিকৃত উপকরণের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর শূন্য হারে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ২ (দুই) শতাংশ হারে পুনঃ নির্ধারণ, প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো খাতের করহার ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ হারে হ্রাস করা, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত রেডিমেড গার্মেন্টসের আয়ের উপর উৎসে কর হার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৩০% ধার্য করা, কোম্পানির কর নির্ধারণ অডিট রিপোর্টকে তথ্যের চূড়ান্ত এবং মূল উৎস হিসেবে বিবেচনা করা, অনুমান নির্ভর কর ধার্য বন্ধ করা এবং প্রাইভেট আইসিডির ক্ষেত্রে ভারী সরঞ্জাম বা মেটেরিয়াল হ্যান্ডেলিং ডিভাইস ইত্যাদি সামগ্রী আমদানি শুল্কের হার হ্রাস করণের প্রস্তাব করেন।
এরপর সিএমসিসিআই সহ-সভাপতি এ.এম. মাহবুব চৌধুরী, সদস্য জামাল উদ্দীন আহমেদ, মাহরুফ পাটোয়ারি, তৌফিকুল ইসলাম ও মনছুর উদ্দীন আহমেদ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
সংগঠনটির প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনার পর বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস নীতি) মো. মাসুদ সাদিক, সদস্য (আয়কর নীতি) ড. সামস উদ্দিন আহমেদ এবং সদস্য (মূসক নীতি) মিজ জাকিয়া সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
সবশেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘আপনাদের যে কোনো সমস্যা নিয়ে আপনারা অ্যাসিস্টেট্যান্ট কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, জয়েন্ট কমিশনারদের কাছে যাবেন। সেখানে যদি কিছু না হয় সরাসরি কমিশনারের কাছে যাবেন। যদি আপনারা সঙ্গত বিষয় নিয়ে কথা বলতে যান, তাহলে উনারা অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন এবং আপনাদের সহযোগিতা করবেন।’
বাণিজ্যনীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘চিটাগংয়ে আপনাদের একটা বড় অংশ ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি ট্রেড অ্যান্ড কমার্সের সাথে জড়িত। আমরা কিন্তু এখন উন্নত দেশ হতে চাই। আমরা আমদানি নির্ভরশীলতা কমাতে চাই। কাজেই আমদানির সুযোগ বৃদ্ধি এখন আমাদের টার্গেট না। আমরা দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটাতে চাই। অনেকক্ষেত্রে আমরা আমদানিকে আরও নিরুৎসাহিত করছি। উৎপাদন বাড়াতে যন্ত্রাংশ আমদানিকে আমরা উৎসাহিত করতে পারি। সরকার শিল্পায়নের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। আপনারা সেটি ব্যবহার করেন। এখানে যেন বিনিয়োগ হয়। বিশেষ করে যেন ভারী শিল্পের বিনিয়োগ হয়।’