নিজস্ব প্রতিনিধি, রাউজান »
দক্ষিন এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে একের পর এক মরছে কার্প জাতীয় মা মাছ ও ডলফিন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও ভেসে উঠেছে মৃত কাতলা মাছ। রোববার সকাল ১১টায় নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় মরা কাতলা মাছ ভেসে উঠে। তা নদী থেকে উদ্ধার করে এলাকার লোকজন। এই মাছটির ওজন প্রায় ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ সেন্টিমিটার।
স্থানীয় বাসিন্দা রোশাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নদীর দক্ষিণ দিক থেকে জোয়ারে ভেসে আসে কাতলাটি। ভাটার কারণে সকাল ১১টার দিকে এটি আজিমের ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে। মাছটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এক সপ্তাহে হালদায় ৫টি রুই-কাতলা মা মাছ মরে ভেসে উঠেছে। ডলফিন মরছে একটি।
কিছু অসাধু মাছ শিকারি এবং নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণেই মা মাছের মৃত্যু হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এভাবে হালদার মা মাছ ও ডলফিন মারা গেলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। এ অবস্থায় হালদার পাড়ে নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
হালদা পাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত সংযুক্ত খালের পানি দিয়ে কলকারখার বিষাক্ত বর্জ্য, ডেইরি-পোল্ট্রি ফার্মের বিষাক্ত বর্জ্য, দুটি বিলের পানি শিল্প ও গৃহস্থালী বর্জ্য দূষণে কালো হয়ে গেছে। এসব পানি হালদায় গিয়ে পড়ছে।
এক সময় হালদায় প্রতিমাসে কমপক্ষে দু-তিনটি অভিযান হতো, সেটি আর চোখে পড়ছে না। হালদায় অবৈধভাবে বড়শী ও জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হলেও হালদায় কোন অভিযান হয়নি গত দুই মাসে। হালদায় আর কত মা মাছ ও ডলফিন মারা গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে- এ প্রশ্ন স্থানীয় জনগণের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগজ্যাই মারমা বলেন, হালদা নদীতে একটি কাতলা মাছ মারা গেছে বলে আমাকে পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফোন করে জানান। পরে মৃত কাতলা মাছটি উপজেলায় নিয়ে আসা হয়। মাছটি হয়তো দুই তিনদিন আগে মারা গেছে, মাছিটি পঁচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পরে মাছটি হালদা পাড়ের মাটির গর্তে পুতে ফেলা হয়।
রাউজান উপজেলা মৎস্য অফিসারকে মৃত কাতলা মাছটির বিষয়ে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট ফেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন- দূষণ, অবৈধ জাল, বড়শি ও বিষ দিয়ে মাছ ধরার কারণে হালদা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। বিষাক্ত বর্জ্য দ্বারা হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্রের পানির বিভিন্ন ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলি পরিবর্তন হয়ে দূষিত করছে হালদার জলজ পরিবেশকে। নদী দূষণ থেকে হালদা জলজ বাস্তুতন্ত্রকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য যেসব খালে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সেসব কারখানা চিহ্নিতপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।