দুষ্প্রাপ্য ইলিশ, কিছু সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের ভরা মৌসুমেও এখন মিলছে না এই রুপালি মাছ। বরিশালের বাজারও প্রায় ইলিশশূন্য। চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে অন্য বছর দক্ষিণাঞ্চলের সাগর, ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী ও সন্দ্বীপ থেকে ইলিশ এলেও এবার তুলনামূলক খুবই কম। শুধু তা-ই নয়, ঘাটে লোকাল পদ্মা-মেঘনার ইলিশের দেখা নেই বললেই চলে। অল্প সংখ্যক নদীর ইলিশ এলেও দাম অনেক চড়া। ফলে আসল রুপালি ইলিশের স্বাদ পাচ্ছেন না ক্রেতারা। সাধারণের কাছে ইলিশ এখন দুষ্প্রাপ্য। অন্যদিকে বরিশালে ইলিশ না পাওয়ার জন্য জেলেরা মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাকে দুষছেন। ইলিশ নিয়ে বাঙালির একটি আবেগ আছে। রসনা তৃপ্তির জন্য না যতটা তার চেয়ে বেশি মানসিক তৃপ্তি। বর্ষা আসবে বর্ষা যাবে কিন্তু ইলিশ খাওয়া হবে না তা মানতে নারাজ বাঙালি। তবে দুঃখজনক হলো, বাঙালির বিশেষ করে বাংলাদেশের জাতীয় মাছটির স্বাদ নিতে পারছে না অধিকাংশ বাঙালি। ইলিশ এখন নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। তা শুধু বড়লোকদের খাবারে পরিণত হয়েছে।
এক কেজি ওজনের কাছাকাছি সাইজের ইলিশের কেজি ২৫০০/২৬০০ টাকা। এর চেয়ে সামান্য বড় হলে তিন হাজার টাকার ওপরে প্রতি কেজি।

চাঁদপুরে যেখানে ইলিশের একরকম ঘাঁটি বলা যায়, সেখানেও এক কেজির মাছ ২৫০০ টাকার আশেপাশে, দেড় কেজির মাছ প্রতি কেজিতে তিন হাজার টাকার ওপরে।

এবছর দাম বেশি হওয়ার পেছনে মোটাদাগে মূল কারণ হিসেবে উঠে আসছে তা হলো, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম হওয়া। অর্থাৎ ভরা মৌসুমে প্রত্যাশার তুলনায় কম মাছ পাওয়া যাচ্ছে। পাশের দেশ ভারতেও এখন ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে না, আবার সেদেশে স্থানীয় যেসব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তার দাম বাংলাদেশের তুলনায় কম।
মৎস্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে যেখানে পাঁচ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হয়েছিল, সেটা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমে পাঁচ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিক টন হয়েছিল।
এবছর আবহাওয়া বেশিরভাগ সময়জুড়েই অনুকূলে না থাকায় ‘জেলেরা ইলিশ ধরতে গিয়েও বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন’ বলছেন মো. আনিছুর রহমান, যিনি একজন ইলিশ গবেষক এবং মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নদীতে অনেক জায়গাতেই নাব্যতা কমে যাওয়া। বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলে সাগর থেকে নদীতে যে পথ ধরে ডিম ছাড়ার জন্য ইলিশ আসে, সেখানে অনেক জায়গাতেই পলি পড়ে ডুবোচর তৈরি হয়েছে। যেখানে ইলিশ অনেকটাই গভীর পানিতে চলাচল করে সেখানে নাব্যতার সমস্যা ইলিশের স্বাভাবিক গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করে।
এই নাব্যতার সমস্যা শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, দেশজুড়েই নদনদীতে প্রভাব ফেলেছে। ফলে ইলিশের বিচরণের পাশাপাশি নৌযান চলাচলেও ব্যাঘাতের কারণ হয়। এছাড়াও রয়েছে দূষণের মতো সমস্যা, যার কারণে মাছের খাবার ও বিস্তারের জন্য পরিবেশ অনেক দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।