সুপ্রভাত ডেস্ক »
সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার আসামি টেকনাফের বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত।
বুধবার চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে শুনানি শেষে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়।
প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করা হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
“পাশাপাশি আরেক আসামি চুমকি কারণের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং তার মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ৭ অক্টোবর,” বলেন মাহমুদুল হক।
বুধবার শুনানির সময় প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।
গত ২৮ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সম্পদ বিবরণীতে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেয়া এবং ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত অর্জন ও অন্যকে হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয় অভিযোগপত্রে।
এতে মোট ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়। এরআগে কয়েক দফায় এই মামলার তদন্ত শেষ করতে আদালতে সময়ের আবেদন করেছিল দুদক।
সিনহ হত্যা মামলায় প্রদীপ গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত বছরের ২৩ অগাস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল মামলায়।
তদন্তের পর টাকার অংকে কিছু পরিবর্তন হয়। ওসি প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জন করেছেন তা স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে যে সব সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো- নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয় তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনা, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারে ফ্ল্যাট।
নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি প্রদীপ কুমার দাশ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তীতে ওই বাড়িটি প্রদীপ দাশের শ্বশুর তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে দান করেন।
আয়কর রির্টানে আসামি চুমকি কারণের কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া পাঁচটি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে তাও স্বামী প্রদীপ দাশের জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনের পর স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের উদ্যেশ্যে ভুয়া ব্যবসা প্রদর্শন করে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে দুদক।
মাছ চাষের ব্যবসার যে হিসেব দেখানো হয়েছে তার বাস্তবে অস্তিত্ব নেই বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।
এরআগে গত ২৯ জুন দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের জব্দ করা সম্পত্তি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের জিম্মায় থাকবে বলে আদেশ দেন আদালত।
কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে বাহারছড়া চেকপোস্টে গত ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
ওই ঘটনার পর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের হাকিম আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেখানে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলিকে ১ নম্বর এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।