দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখতে চায় দেশবাসী

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার সংস্কৃতি থেকে আমরা মুক্তি পাইনি। বিশেষ করে সরকারি অফিসসমূহ থেকে সাধারণ মানুষের হয়রানি বন্ধ করা যায়নি। বন্ধ করা যায়নি ঘুষ, দুর্নীতির মতো অপকর্মও। বিগত সময়ে মানুষের বড় অভিযোগ ছিল দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে। সরকার পতনের পর তাই মানুষের ধারণা বা বিশ্বাস জন্মেছে এবার দেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাই সরকারি অফিসে সেবা সহজ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন সচিবদের । তিনি বলেছেন, ‘সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষের ভয় রয়েছে। সেবার জন্য গেলেই ভোগান্তিতে পড়া, হেনস্তা হওয়া ও নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। মানুষের এসব ভয় দূর করতে প্রশাসনিক, আইনি ও প্রক্রিয়াগত সব বাধা দূর করুন। প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন।’

অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঘুষ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন। গত শনিবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাকালে উপদেষ্টা এ নির্দেশনা দেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতিকে কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। প্রয়োজনে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে। বিজিবিকে আইন অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধ করা বিজিবির মূল দায়িত্ব। তিনি এসময় বিজিবিকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুধু কোটার জন্য হয়নি। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে ঘুষ, দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। ঘুষ খাওয়া চলবে না। যেভাবেই হোক ঘুষ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতি ও ঘুষ না খেয়ে সম্মান পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ ঘুষ খেলে ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।’

আসলে আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি এমন শক্ত আসন গেড়েছে যে, একে চুরমার করে রাতারাতি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বানিয়ে ফেলার কাজটি একেবারে সহজ না হলেও কিন্তু অসম্ভব নয়। কংক্রিটের দেয়াল যত শক্তই হোক তাকে ভাঙতে হাতুড়ির আঘাতই যথেষ্ট। হয়ত অনেকসময় কঠিন আঘাত করতে হয়। দুর্নীতিকে এদেশ থেকে পুরোপুরি বিতাড়িত করতে আমাদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। আমাদের সকলের আন্তরিক ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করছে দুর্নীতি আমাদের দেশ থেকে নির্মূল হবে কি হবে না। জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকে আন্তরিক হলে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা কঠিন কোনো কাজ নয়।