বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের সাংকিং খুমিপাড়ার অধিবাসীরা পানির চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাদের পানির কষ্ট এমন অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে যে, তারা পানির কষ্টে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন।
দুর্গম এলাকায় পানির উৎস ছড়া, পাড়াটির পাশ দিয়ে দুটি ছড়া থাকলেও তার পানিতে অতিরিক্ত ময়লা এবং তা দুর্গন্ধযুক্ত। খাওয়ার পানির জন্য রয়েছে ছোট একটি কুয়া, শুকনো মৌসুমে কুয়োর পানি শুকিয়ে যায়। বর্ষার সময় বাদ দিলে অন্য ৮মাস তাদের পানির সংকটে থাকতে হয়। দুর্গম এই এলাকার পানির কষ্ট উপজেলা প্রশাসন অবহিত নয় বলে জানিয়েছেন ইউএনও মো. আবদুল্লাহ আল জাবেদ। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল পানির এই সমস্যা দূর করার উপায় ও খুঁজে পাচ্ছে না বলে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পাড়াপ্রধান নংলংখুমি সংবাদ মাধ্যমে এলাকার ১৮টি পরিবারের পানির কষ্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, সুপেয় পানি পাওয়া যায় এমন কোন স্থানে পাড়াবাসীরা চলে যাওয়ার চিন্তা করছেন। পাশের অংতং খুমিপাড়ায় ২২ পরিবারের একই সমস্যা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাশের ছড়ার নোংরা পানিতেই তাদের গোসল সারা হয়। নারী ও শিশুদের কষ্ট অবর্ণনীয়। পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় পানির উৎস ছড়া ও লেক। গাছপালা উজাড় হয়ে যাওয়ায় ছড়া শুকিয়ে যায় শুকনো মৌসুমে। তাছাড়া ময়লা আবর্জনায় ছড়ার প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। পানির অভাবের কারণ হিসেবে পরিবেশ বিপর্যয় ও মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করছেন বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি জুয়ামলিয়ান আমলাই।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী জানান, পাহাড়ে অনেক এলাকা পাথুরে হওয়ায় গভীর নলকূপ, রিংওয়েল বসানো যায় না। পানি সরবরাহের অন্য উপায় গ্র্যাভিটি ফ্লোর সিস্টেম, তাও উপযুক্ত জায়গায় পানির উৎস থাকতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
পানির এই কষ্ট উক্ত পাড়ার মানুষের দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কিংবা ওয়ার্ড মেম্বারের তা জানার কথা। পানিপ্রাপ্যতায় ছড়াগুলি পরিষ্কার রাখা এবং প্রয়োজনীয় গাছপালা না কাটতে পাড়ার লোকজনকে সচেতন করা প্রয়োজন। আর একটি বিকল্প হলো জলাধার নির্মাণ করে বর্ষার পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা। যেভাবেই হোক, মানুষগুলোকে এই অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে হবে। জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পানি যাতে তারা পায় তার ব্যবস্থা প্রশাসনকে করতে হবে। পানির কষ্টে গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন গ্রামবাসীরা, এতে তাদের কষ্ট কত দুঃসহ তা সহজেই অনুমেয়। বিভিন্ন কারণে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিবাসীদের আদি বাসস্থান থেকে স্থানান্তর ঘটে, এতে একটি নৃ-গোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্য-ভাষা-সংস্কৃতি বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয় এবং তা আমাদের জাতীয় সত্তার বৈচিত্র্যকে ম্লান করে দেয়।
স্থানীয় প্রশাসনের উচিত, আওতাধীন এলাকার সকল মানুষের সুখ সুবিধার প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং তাদের সমস্যাবলী অবহিত হয়ে প্রতিকার করা। আমাদের অদূরদর্শী কর্মকা-ে প্রতিনিয়তই পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে এবং তার জন্য চড়ামূল্যও দিতে হচ্ছে আমাদের। আমরা মনে করি, পাহাড়ি অঞ্চলে পানির উৎসগুলির প্রবাহ সচল রাখতে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। উল্লেখিত পাড়ার অধিবাসীদের পানির সংকটের সমাধানকল্পে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসন অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবেÑ আমরা তা চাই।
মতামত সম্পাদকীয়