দুই মাস পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের ঘরে

আকুর বিল আগামী সপ্তাহে

সুপ্রভাত ডেস্ক  »

অবশেষে দুই মাস পর রিজার্ভ পৌঁছাল ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। তবে আগামী সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর বিল পরিশোধ করতে হবে, এতে আবার তা কমে যেতে পারে।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপিএম৬ পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। বছর ৪ সেপ্টেম্বরের পর প্রথমবারের মত এই সীমায় উঠতে পারল এটি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের চারদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করে। ওই হিসাব অনুযায়ী ৩০ জুলাই তা ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার, ২১ অগাস্টও ছিল তাই।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর ১২ সেপ্টেম্বর তা নেমে হয় ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে। গত মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাবে এক সপ্তাহে যোগ হয়েছে ১৩ কোটি ডলার। তারও আগের সপ্তাহে ২৩ অক্টোবর রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ওই সপ্তাহে বাড়ে ৭ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ার কারণেই রিজার্ভ বেড়েছে। তবে সরাসরি রেমিটেন্স রিজার্ভে যোগ হয় না।’

টানা তিন মাস ধরে প্রবাসী আয় এসেছে ২ বিলিয়নের বেশি। এর মধ্যে অগাস্টে এসেছে ২ দশমিক ৩২ বিলিয়ন, সেপ্টেম্বরে ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন এবং অক্টোবরে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য রেমিটেন্স কখনও সরাসরি রিজার্ভে জমা হয় না। ব্যাংকগুলোতে প্রবাসী আয় আসার পর ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি করে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকেও বিক্রি করে।  খবর বিডিনিউজ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা অবশ্য রিজার্ভ কিছুটা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা কমে যাওয়ার কথা বলেছেন।

‘আমদানি এলসি কমে যাওয়ার কারণেই ব্যাংকে ব্যাংকে ডলার চাহিদা কিছুটা কমেছে। আর অপরদিকে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে। তাই রিজার্ভ বেড়েছে’, বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই—সেপ্টেম্বর) কমেছে এলসি (ঋণপত্র) খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মোট আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে প্রায় ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। একইভাবে নিষ্পত্তির কমেছে ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশের মত। চলতি বছরের জুলাই—সেপ্টেম্বরে আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৯ কোটি ডলারের। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৭১ কোটি ডলারের এলসি। জুলাই—সেপ্টেম্বর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৪১ শতাংশের বেশি। তিন মাসে ৩৮ কোটি ডলারের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই—সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানি হয়েছিল ৬৫ কোটি টাকার মূলধনি যন্ত্রপাতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি বিপিএম—৬ অনুসারে নিট রিজার্ভ গণনা করা হয়। গ্রস বা মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানা যায়। আইএমএফের ঋণ অনুমোদনের পর ২০২৩ সালের জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই তথ্য প্রকাশ করছে। এসব দায় বাদ দিয়ে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার।

আকুর বিল পরিশোধে কী হবে

আকুর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আমদানি দায় মেটাতে সেপ্টেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশ পরিশোধ করে ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে এই দায় মেটানো হয়। এই বিল পরিশোধের পরেই রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। এবার আকুর বিল দেড় বিলিয়ন ডলার হবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। দুই মাস পরপর আকুর বিল পরিশোধ করে বাংলাদেশ।