সুপ্রভাত ডেস্ক »
সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে অবসরে গিয়ে পেনশনভোগী কর্মকর্তা-কমর্চারীরাও পাবেন এই সুবিধা। এদের মধ্যে কর্মকর্তাদের জন্য একটু কম এবং কর্মচারীদের জন্য একটু বেশি দেওয়া হতে পারে। পিয়ন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত সবাই এই মহার্ঘভাতা পাবেন। তবে এর দুটি ধাপ হতে পারে।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত আছেন।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবের দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে জীবনযাপনে কুলিয়ে ওঠার জন্য যে বিশেষ ভাতা দেওয়া হয়, তাকে মহার্ঘ ভাতা বলা হয়। এতে মূল বেতনের নির্দিষ্ট শতকরা অংশ বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত দেওয়া হয়, অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন বাড়বে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যাঁরা আছেন, তাদের জন্য একটি সুখবর দিতে চাই। যেহেতু পে কমিশন করা একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। অন্তর্বর্তী সময়ে একটি মহার্ঘভাতা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে আমিও আছি। আমরা সামনের সপ্তাহে প্রথম সভা করব।’
এদিন মহার্ঘ ভাতা ও বঞ্চনা নিরসন কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়টি সময়োপযোগী। তাই সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বেতন স্কেল অনুসারে সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এই মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে। এই লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিটি সুপারিশ দেবে।
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে গঠিত কমিটির দেওয়া সুপারিশ অনুসারেই এটি বাস্তবায়ন হবে জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদন অনুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা আসলে একদিনের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
এরই মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতার বিষয়ে কমিটি গঠন করেছে অর্থ বিভাগ। কত শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে সেটি কমিটি ঠিক করবে বলেও জানিয়েছেন মোখলেস উর রহমান। তিনি জানান, সচিব থেকে পিয়ন পর্যন্ত সবাই এই ভাতা পাবেন। তবে হয়তো একটা স্লাব করা হবে।
মূল্যস্ফীতি থাকলেও অর্থনৈতিক সংকটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন পে স্কেল (বেতন কাঠামো) দেওয়ার পরিকল্পনা নেই সরকারের। এ কারণে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে একটি পর্যালোচনা কমিটিও গঠন করা হয়। বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ জারি করে। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটিতে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অর্থ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব।
সরকারি কাজে নিয়োজিত জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-এর আওতাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা সংস্থানের বিষয়টি পর্যালোচনা করে সুপারিশ করার জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, মহার্ঘ ভাতার প্রযোজ্যতা ও প্রাপ্যতার বিষয় পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ দাখিল করবে কমিটি। প্রয়োজনে এক বা একাধিক কর্মকর্তাকে আত্তীকরণ করতে পারবে।
সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর একটি নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করার কথা। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অষ্টম বেতন স্কেল কার্যকর হয়। সে সময় নতুন স্কেলের সুপারিশ না করলেও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে বার্ষিক বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) প্রস্তাব ছিল বেতন কমিশনের। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পান। এদিকে বাড়তি মূল্যস্ফীতিতে বেতন বাড়াতে নতুন পে স্কেল ঘোষণাসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আসছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে তা কার্যকর না হলেও মূল বেতনের ৫ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দেওয়া হয়। এতে দশম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন বাড়ে ৪১২ থেকে ৮০০ টাকা। কিন্তু মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম এক হাজার টাকা ও পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০০ টাকাকরা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় আড়াই বছর ধরে দেশে ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এ প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়, যা এ অর্থবছরেও চলমান। তবে প্রায় ৯ বছর নতুন পে স্কেল না হওয়ায় বাড়তি মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করাও যৌক্তিক হবে না। এ অবস্থায় গঠিত কমিটি মহার্ঘ ভাতার পরিমাণ নির্ধারণের পাশাপাশি বাড়তি ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বলবৎ থাকবে কিনা, তা চূড়ান্ত করবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত নভেম্বরে সারাদেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে নভেম্বরে সারাদেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
সাধারণত মহার্ঘ ভাতা বিশেষ পরিস্থিতিতে দেওয়া হয়। তাই এ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হয় না। ফলে তাদের বাড়ি ভাড়াসহ অন্য কোনো ভাতার হেরফের হয় না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ কর্মচারী কর্মরত। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। বাজেটে মহার্ঘ ভাতায় কোনো বরাদ্দ নেই। তবে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ হার চূড়ান্ত করে পরিচালন বাজেটের অন্য খাতের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
এদিকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবির ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।