নিজস্ব প্রতিনিধি, কাউখালী
ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়। যে স্কুল থেকে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের প্রাণ ভোমরা ঋতুপর্ণা, মনিকা, রূপনা, আনাই ও আনুচিং মগিনীর মত ফুটবলারেরা। তাদের এই বিদ্যপীঠে ২০১৭ সালে ১৩ জুনের পর থেকে কয়েক ঘন্টার বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে নিয়মিতভাবেই ডুবছে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়টি।
বর্ষা শুরুর আগেই মে মাসের শেষের দিকে কয়েকদিনের টানা বর্ষণে খেলোয়াড়দের থাকার হোস্টেল, অফিসকক্ষসহ নিচ তলার প্রায় সব কয়টি শ্রেণিকক্ষ পানিতে ডুবে যায়। সর্বশেষ ১০ জুন মাত্র কয়েক ঘন্টার ভারী বৃষ্টিতে ২ দফায় পানি ওঠে স্কুলটিতে। এতে করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানসহ হোস্টেলে থাকা নারী শিক্ষার্থীরা পড়েছে চরম বিপাকে।
বুধবার (১১ জুন) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঘাগড়ায় ছড়ার পানি উঠেছে ছাত্রী হোস্টেল, অফিসকক্ষসহ বেশ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে, আর সেগুলো পরিষ্কার করছেন ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক বিমলেম্বর চাকমাসহ স্কুলেরই কয়েকজন শিক্ষার্থী। ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে জয়িতা নামের ছাত্রী হোস্টেলে থাকা মালামালের। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঁদামাটি মাখা শিক্ষার্থীদেও তোষক, কাপড়চোপড়সহ প্রয়োজনীয় অসবাবপত্র। নষ্ট হয়ে গেছে অনেকের বইপত্রও।
স্থানীয়রা বলছেন, ঘাগড়া ছাড়ায় পাহাড়ি ঢলে মাটি জমে অনেকটা ভড়াট হয়ে গেছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই পানিতে ডুবে যায় ছড়া তীরবর্তী ঘাগড়া স্কুল, ঘাগড়া বালিকা স্কুলসহ প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি। বারবার ঘাগড়া স্কুলে পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে যেমনিভাবে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে তেমনি হোস্টেলে থাকা নারী শিক্ষার্থী ও ক্ষুদে ফুটবলাদের প্রশিক্ষণেও ব্যাঘাত ঘটছে। সরেজমিনেও একই অবস্থা দেখা গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যেখান থেকে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করার মতো নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা, মনিকা, রূপনা’রা তৈরি হয় সেই স্কুলটির এই দুর্দশা খুবই দু:খজনক।
ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্র দেওয়ান জানান, ২০১৭ সালের ১৩ জুন প্রথম স্কুলে পানি ওঠে। এর পর থেকে প্রতি বর্ষায় নিয়মিতই পানি ওঠে। এটা যেনো নিয়মে পরিণত হয়েছে। ১১ জুন সকালে হোস্টেলসহ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ পানিতে ডুবে যায়। দুপুরে পানি নেমে যাওয়ার পর রুমগুলো পরিষ্কার করা হলে বিকেলে আবার ভারী বর্ষণের ফলে স্কুলে পানি ওঠে। এভাবেই যাচ্ছে আমাদের বর্ষকালের দিন গুলো। অনেক দেনদরবার করে উন্নয়ন বোর্ড থেকে স্কুলের পিছনে মে মাসে মাটি ভাঙন এবং পানি প্রবেশ প্রতিরোধে ১২০ ফুটের একটি ওয়াল নির্মাণ করা হয়। যেখানে ওয়াল নির্মাণের প্রয়োজন ছিলো অন্তত ২০০ ফুট। যতদিন পর্যন্ত স্কুলের পিছনের পুরো অংশে ওয়াল নির্মাণ না হবে এবং ছড়ার খনন কাজ না হবে ততদিন স্কুলে পানি উঠতেই থাকবে।
প্রশাসনের কাছে এর স্থায়ী সমাধানে সহযোগিতা চেয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
কাউখালী উপজেলা নিবাহী অফিসার কাজী আতিকুর রহমান বলেন, ‘গতমাসেই ঘাগড়া স্কুলে পানি ওঠার বিষয়টি প্রথম জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি, নতুন অর্থবছরে এই সমস্যা গুলোর সমধান হয়ে যাবে।’