নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি :
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বরাদ্দকৃত অর্থে ডিভাইস ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুই বছর আগে বরাদ্দ আসলেও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোন ডিভাইস কেনা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে এসব অর্থ আত্মসাৎ করেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন।
জানা গেছে, ‘প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসিসটিভ ডিভাইস ক্রয়ের জন্য দীঘিনালা উপজেলায় ইউপেপ (উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিকল্পনা) কর্মসূচির আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ৩য় শিক্ষা কর্মসূচি (পিইডিপি-৩) ৫০ হাজার বরাদ্দ দেয়া হয়। পরবর্তী অর্থ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ৪র্থ শিক্ষা কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) এর আওতায় ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধীতে শিশুদের মধ্যে অ্যাসিসটিভ ডিভাইস ক্রয়ের জন্য এসব দুই অর্থ বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের জন্য অ্যাসিসটিভ ডিভাইস ক্রয় না করে সেসব অর্থ আত্মসাৎ করেছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন। বরাদ্দ পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে অর্থ ব্যয়ের বিবরণী বিন এ লিপিবদ্ধ করার নিয়ম থাকে। সেখানে তিনি ভুয়া তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া বরাদ্দ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে উপজেলা কমিটির মিটিং করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা তিনি করেনি। বরাদ্দ প্রাপ্তির ২টি অর্থ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর চলতি বছরের ৬ জুন এই নিয়ে সভা করেন।
তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চলতি মাসের ১২ তারিখে চিঠি দিয়েছে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ‘প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইজ বিতরণ না করে সেই অর্থ আত্মসাৎ করা করেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
এদিকে গত বছব প্রতিবন্ধীতে প্রয়োজনীয় ডিভাইস ক্রয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না করার প্রসঙ্গে তৎকালীন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুভায়ন খীসাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন। ২০১৯ সালে ২৭ জুলাই এর লিখিত জবাব দেয় সুভায়ন খীসা। লিখিত জবাবে দুই অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ১ লাখ ৩০ টাকায় প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস ক্রয় না করার বিষয়টি উঠে আসে।
দীঘিনালায় ১ নম্বর কবাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদ্দিউজ্জামন জীবন জানান, ‘২০১৭-১৮ অর্থ এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রতিবন্ধীদের তালিকা নেয়া হয়েছে। আমার স্কুলে তিন জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত কোন ডিভাইস উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে পায়নি।’
উপজেলা শিক্ষা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফা কালাম মিন্টু জানান, ‘উপজেলা শিক্ষা কমিটির মিটিংয়ে দুই অর্থবছরে প্রতিবন্ধীতে বরাদ্দকৃত অর্থ (১ লাখ ৩০ হাজার টাকা) বিতরণ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি (শিক্ষা কর্মকর্তা) জানান টাকাগুলো মাদার একাউন্টে আছে এবং অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে ডিভাইস বিতরণ হয়ে গেছে। তিনি বরাদ্দকৃত অর্থ বিতরণ না করে প্রতিবন্ধীতে শিশুদের সরকার সহায়তা থেকে বঞ্চিত করেছে।’
দীঘিনালা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন জানান, ‘তৎকালীন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুভায়ন খীসার অসহযোগিতার কারণে প্রতিবন্ধীদের ডিভাইস বিতরণ করতে পারিনি। পরে তাকে প্রতিবন্ধীদের তালিকা চেয়ে শোকজ করার পর তিনি তালিকা দেয়। এছাড়া শিক্ষা কমিটিও আপটেড ছিল না।
এসময় তিনি আরো বলেন, ‘আমি কখনোই কোন অনিয়মের সাথে জড়িত নই। আমাকে হেয় করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। দীর্ঘ দুই বছরেও কেন প্রতিবন্ধীদের কোন প্রতিবন্ধী শিশুদেও ডিভাইস প্রদান করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন জানান, বিষয়টি শুনেছি। বর্তমানে এটি তদন্তাধীন রয়েছে।