নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতকানিয়া :
সাতকানিয়ায় প্রতিপক্ষের দায়ের কোপে দুই ছাত্রলীগ নেতা গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন তৌহিদুল ইসলাম (২৬) ও আবু সুফিয়ান (১৯)। আহত আবু সুফিয়ান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। গুরুতর আহত তৌহিদুল ইসলামকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তৌহিদুল উপজেলা বাজালিয়া ইউনিয়নের বড়দুয়ারা এলাকার শফিক আহমদ প্রকাশ শফি মেম্বারের ছেলে। বর্তমানে তিনি বান্দরবান সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়রত এবং ওই অনুষদের ছাত্রলীগের সহসভাপতি। অপরদিকে আবু সুফিয়ান একই এলাকার আলহাজ কবির আহমদ চৌধুরীর ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে বর্তমানে অলি আহমদ বীরবিক্রম কলেজে অধ্যয়নরত এবং কলেজ ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করছেন। ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার বেলা একটার সময় উপজেলার বাজালিয়া-কেরানিহাট-বান্দরবান সড়কের হলুদিয়া জামে মসজিদ এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, তৌহিদ ও সুফিয়ান একত্রে মোটরসাইকেলযোগে হলুদিয়া এলাকায় এসে আরো কয়েকজন বন্ধু মিলে চা-নাশতা খান। চা খেয়ে বাড়ি ফেরার সময় মোটরসাইকেলে আরেক বন্ধু আরমান ওঠেন। মোটরবাইক হলুদিয়া মসজিদ এলাকায় সড়কের স্পিডব্রেকারে গতি কমানোর সাথে সাথে ওখানে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা বাবলু বড়ুয়া ও আলমগীর তাদের দিকে লম্বা ধারালো দা’ নিয়ে তেড়ে আসে। আলমগীরের হাতে দা দেখতে পেয়ে মোটরসাইকেল থেকে লাফ দিয়ে আরমান পালিয়ে রক্ষা পেলেও তৌহিদ এবং সুফিয়ানকে আলমগীর এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় তৌহিদ দা’য়ের কোপ সহ্য করতে না পেরে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ঝাঁপ দেন। দায়ের কোপে তৌহিদের বাম হাতের কব্জি ও ডানহাত হাড়সহ মারাত্মকভাবে কেটে যায় এবং আবু সুফিয়ানের বামহাতের অংশবিশেষ কেটে যায়। স্থানীয়রা তাদের চিৎকারে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তৌহিদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকারপঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় আহতদের পরিবার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগনেতৃবৃন্দের অভিযোগের তীর বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্তের দিকে। তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান তাপস এলাকার কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের নিয়ে চুরি-ছিনতাই, মাদকব্যবসা, রাহাজানি ও মারামারি ইত্যাদি করে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছেন। এসব করে তিনি স্থানীয় রাজনীতিতেও গ্রুপিং সৃষ্টি করছেন। চেয়ারম্যান তাপসের অপকর্ম যারা সমর্থন করেন না, তারাই তার হামলার শিকার হন। গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। অনেকে বলছেন, ঘটনার সময় তাপস চেয়ারম্যান ঘটনার অদূরে সেনাবাহিনীর ফায়ারিং এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তবে এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্তের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। অপরদিকে হামলাকারী আলমগীরের পিতা সোয়ায়মান বাঁশি বলেন, এ ঘটনার আগের দিন বুধবার একই স্থানে আমার ছেলে আলমগীরকে তৌহিদ এবং আরো কয়েকজন মিলে বেধড়ক মারধর করেছে। বৃহস্পতিবার আমার ছেলে ওই এলাকায় বাগান থেকে গাছ কেটে বাড়ি ফেরার পথে পুনরায় গতিরোধ করে পায়ে গুলি করার চেষ্টা করলে আত্মরক্ষার্থে তার হাতে থাকা দা’ দিয়ে কোপ দেয়।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাজালিয়ার বিষয়টি জেনেছি এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ থানায় মামলা কিংবা অভিযোগ দায়ের করেনি। এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় প্রাণঘাতী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।