নিজস্ব প্রতিবেদক »
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পশুর উৎপাদন বাড়লেও বেশ চড়া কোরবানির পশুর বাজার। বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও দাম নিয়ে ক্রেতাদের অসন্তোষ। অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম ও পশুপালনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর কোরবানির পশুর দাম গত বছরগুলোর তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ী ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খামার পর্যায়ে গত বছর ছোট ও মাঝারি আকৃতির (৩ থেকে ৫ মণ) ওজনের গরুর দাম ছিল মণপ্রতি ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা, যা এ বছর বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকায়। অন্যদিকে গতবছর বড় গরু (৫ মণের বেশি) মণপ্রতি ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হলেও এ বছর বিক্রি করছে ২৫ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা।
অন্যদিকে গরু কেনা নিয়ে নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের রয়েছে সংশয় ও অশান্তি।
কোরবানিগঞ্জ থেকে বিবিরহাটে আসা মো. আমিনুর রহমান বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত গরু আসলেও বিক্রেতাদের চড়া দামে দিচ্ছে। যার ফলে নির্ধারিত বাজেটের বেশি হয়ে যাচ্ছে। দুই মণ ওজনের যে গরু ৪৬ থেকে ৫০ হাজার টাকায় পাওয়া যেত তা বিক্রেতারা দর দিচ্ছে লাখের উপরে। একটু লাল রঙের হলে দেড় লাখ টাকা হাঁকায়। আয়-ব্যয় সব হিসেব করে অনেকটা সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাচ্ছে কোরবানিদাতাদের।
একই বাজারে আসা আরেক ক্রেতা মো. জুবায়ের বলেন, প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় গরু কিনি। এ বছর এ বাজেটে গরু মিলছে না। বিক্রেতারা বেশি দাম বলছে। এই বছর আদৌ গরু কিনতে পারবো কি’না এ নিয়ে সংশয়ে আছি।
এদিকে পশুর দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও পশুপালনের খরচ বৃদ্ধির কারণে পশুর দামে সমন্বয় হিসেব করে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা ও খামারিরা।
নগরীর পশুরহাট বিবিরহাট, পোস্তারপাড় বাজারের ঘুরে দেখা যায়, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে খামারি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। বাজারে বেশ গরু রয়েছে। এ বছর বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরু পালনে বেশি মনযোগী খামারিরা। বাজারে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও সে হারে ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেকটা কম। তার মধ্যে গরুর দাম নিয়েও ক্রেতা-বিক্রেতাদের রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। কাক্সিক্ষত ক্রেতা না পাওয়ায় অনেক বিক্রেতা হতাশা প্রকাশ করেন।
সল্টগোলা ক্রসিং এলাকার এসটি ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, পুরো দেশে আমাদের দুটি খামারে মোট ৭৪টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টি চট্টগ্রামে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের উপস্থিতি ভালো। তবে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন অন্যান্যবারের তুলনায় এবার গরুর দাম বাড়তি। কিন্তু আমাদেরও পশু খাদ্য, চিকিৎসা খরচসহ পশুপালনের যাবতীয় খরচ হিসাব করে দাম নির্ধারণ করতে হচ্ছে।
এদিকে বিবিরহাটের গরু ব্যবসায়ী মো. জামাল ব্যাপারি বলেন, এবার ১৪টি গরু হাটে তুলেছি। ক্রেতাদের আগ্রহ ২ থেকে ৩ মণ ওজনের মাঝারি গরু। এখনো একটিও বিক্রি করতে পারিনি। ক্রেতারা যেভাবে দর হাঁকাচ্ছে, সে দরে বিক্রি করলে মণপ্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লোকসানে থাকবো।
বিবিরহাটে গরু নিয়ে আসা মো. মাসুদ নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ক্রেতারা যে দামে কিনতে চাচ্ছে তাতে আমাদের মতো তরুণরা পশুপালনে আগ্রহ হারাবে। কারণ একটি গরুর পেছনে যা খরচ হয়, তা হিসেব করে বিক্রি করলে লাভ থাকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। এখন ক্রেতারা যেভাবে দর দিতে চাচ্ছে তাতে বড় লোকসানে থাকবো।
পোস্তারপাড় বাজারের গরু বিক্রেতা আসাদ উল্লাহ বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত গরু এসেছে। কিন্তু সে হারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
অনান্য বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর যোগান বেড়েছে। এবার কোন ধরনের পশু সংকট নেই। যা দেশীয় পশু দিয়েই চট্টগ্রামের কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে জানান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার চট্টগ্রামে উৎপাদিত গবাদি মোট পশু ৮ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। তার মধ্যে গরু ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি, মহিষ ৭১ হাজার ৩৩৩টি, ছাগল ও ভেড়া ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪০৫টি এবং গয়াল, দুম্বাসহ অন্যান্য ১০২টি। সর্বশেষ গত ২০২২ সালে চট্টগ্রামে পশু উৎপাদন হয় ৮ লাখ ১৯ হাজার ৪৪২টি। আর জবাই হয় ৮ লাখ ১ হাজার ৩৫০টি। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ১৮ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থেকে যায়। ২০২৩ সালের সম্ভাব্য চাহিদা ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৭১৩টি এবং উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। ঘাটতি রয়েছে ৩২ হাজার ৫৪৮টি। এ ঘাটতি আশেপাশের জেলা থেকে গরুর আসলে পূরণ করা সম্ভব বলে জানান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর পশুর উৎপাদন বেড়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশু দিয়ে ৯৫ থেকে ৯৬ শতাংশ চাহিদা পূরণ করা যাবে। বাকি ৪ থেকে ৫ শতাংশ পশু চট্টগ্রামের আশপাশের স্থান থেকে আসবে। সুতরাং অন্যান্যবার দেশে পশুর সংকট সৃষ্টি হলেও এবার হবে না।