সুপ্রভাত ডেস্ক »
সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসকে ‘স্বাধীন’ বলে ঘোষণা করল সে দেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী। রবিবার সকালেই দামাস্কাসে প্রবেশ করেছেন বিদ্রোহীরা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ রাজধানী ছেড়েছেন। তবে তিনি দামাস্কাস ছেড়ে কোথায় গিয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজ়ি জালালিও জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত। এই তপ্ত পরিস্থিতির আবহে সিরিয়ার সরকারি টেলিভিশনে এক ভিডিয়ো বার্তায় দামাস্কাসকে ‘স্বাধীন’ শহর বলে দাবি করেছেন বিদ্রোহীরা। বাশার ‘ক্ষমতাচূত’ হয়েছেন বলেও দাবি করছেন তাঁরা।
কাতারের দোহায় সিরিয়ার দূতাবাসে ‘স্বাধীনতা’ উদযাপন শুরু হয়ে গিয়েছে। কাতারের সরকারি সংবাদমাধ্যম আল জাজ়িরা জানিয়েছে, দোহায় সিরিয়ার দূতাবাস থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে ‘স্বাধীনতার ভোর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সঙ্গে আরও দাবি করা হয়েছে, “স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে সিরিয়া।” সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শাহা জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত ‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী’ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির দেখভাল করবেন। ঘটনাচক্রে রবিবার সকালে আসাদ রাজধানী ছাড়ার পরে প্রধানমন্ত্রী জালালি জানান, বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে প্রস্তুত বাশারের সরকার। তবে তিনি চান, বিষয়টি শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হোক।
রোববার সকালেও সিরিয়ার সেনা দাবি করেছিল, বেশি কিছু অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ জারি রয়েছে। হামা, হোমস্ এবং ডেরায় বিদ্রোহীদের ঠেকানোর চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছিল সেনা। কিন্তু তার পর থেকে সেনার তরফে আর কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
সিরিয়ার দুই বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী রবিবার সকালে দামাস্কাসে ঢুকে পড়ে। গত কয়েক দিন ধরেই সিরিয়ার একের পর এক শহর দখল করতে শুরু করেন বিদ্রোহীরা। রবিবার তাঁরা ঘিরে ফেলেন রাজধানী শহর দামাস্কাস। রাজধানীতে তাদের প্রবেশ আটকাতে পারেনি সেনা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, এক প্রকার বিনা বাধায় রাজধানী ‘দখল’ করে নেন বিদ্রোহীরা। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি সরকার। বিদ্রোহের ফলে দেশ জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দামাস্কাসে রবিবার সকাল থেকে গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বাসিন্দারা ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না।
রোববার সকালে বিদ্রোহীরা দামাস্কাসে প্রবেশের পরেই রয়টার্স জানায়, আসাদ রাজধানী ত্যাগ করেছেন। তবে তিনি কোথায় রয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সিরিয়ার সেনাবাহিনী সূত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, আসাদ একটি বিমানে উঠেছেন। তবে কোথায় যাচ্ছেন, তা প্রকাশ করা হয়নি। প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থকেরা সরকার পতনের আশঙ্কায় রাজধানী ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন, রেডিওসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা।
দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সামরিক বাহিনীকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এইচটিএসের প্রধান আবু মোহাম্মেদ আল-জোলানি।
তিনি বলেছেন, দায়িত্ব হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত সিরিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটির সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকবে।
এদিকে, রাজধানীর সবচেয়ে বড় কারাগার সেদনায়া থেকে হাজার হাজার বন্দিকে মুক্ত করেছে বিদ্রোহীরা।
বিদ্রোহীরা বলছে, আসাদ সরকারের নিপীড়নের শিকার শত শত মানুষ যারা কারাবন্দি ও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন তারা এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারেন।