নিজস্ব প্রতিবেদক »
৮১ দিন বন্ধ থাকার পর চারুকলা ইনস্টিটিউটের তালা খুললেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার দাবি ছাড়া যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান করেন তিনি।
গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সরেজমিনে ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী।
বৈঠকে শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, ‘সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করে আপনারা যাতে ভালো একটি পরিবেশ পান- সে চেষ্টা আমাদের সবসময় থাকবে। কিন্তু তার মানে এই না যে, আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, সমস্যা আছে বলে আমরা ৩ মাস ধরে পুরো ইনস্টিটিউট বন্ধ করে রাখবো। এটা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য। ভর্তি হওয়ার পর কেউ যদি বলে, আমি ভর্তি হওয়ার আগে কোন জায়গায় ক্লাস করবো সেটাই জানতাম না- এক্ষেত্রে আমি বলবো যে প্রকৃত দোষটা আপনাদের।’
এসময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
এদিন নগরীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধনকালে চারুকলার প্রসঙ্গে এনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘চারুকলা ইনস্টিটিউটে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা, সেটি নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনায় বসেছিলাম। আমরা শিক্ষার্থীদেরও কথা মন দিয়ে শুনেছি, তাদের যেসব সমস্যা আছে, যৌক্তিক দাবি আছে- সেগুলো পূরণ করার জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেসব আলোচনা করেছি এবং সবশেষে ইনস্টিটিউটটি সশরীরে গিয়ে খুলে দিয়ে এসেছি।’
এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শহীদ বলেন, ‘১২ বছরেও চারুকলা ইনস্টিটিউটের গুরুতর সংকটগুলো যে নিরসন হয়নি সেই ব্যর্থতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও চারুকলার বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি চারুকলা শহরে স্থানান্তরের সময় কোনো মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে না আসারও সমালোচনা করেন। উপার্চায ম্যাম আমাদের জানিয়েছেন, ভূমিগত জটিলতার কারণে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আমাদের জন্য জরুরি ছিল। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, মূল ক্যাম্পাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। আমাদের প্রশ্ন, তাহলে ফেরা না ফেরার সিদ্ধান্ত যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হয় তাহলে ৮১দিন যাবত কালক্ষেপণ কেন করা হলো? শিক্ষা উপমন্ত্রী আমাদেরকে জানিয়েছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের যে বাজেট স্বল্পতা আছে সে বাস্তবতা থেকে মূল ক্যাম্পাসে হস্তান্তরে অবকাঠামো একটি বিশাল বড় ফ্যাক্ট। আমরা বলেছি, আপাতত নতুন অবকাঠামো চাইছি না, ঝুঁকিহীন স্থায়িত্বপূর্ণ অবকাঠামো হলে চলবে। তবে ৩ মাস অক্লান্ত আন্দোলনের পর সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আমরা ফিরতে চাই না। দীর্ঘ ১২ বছরেও সংকট নিরসনের কোনো উদ্যোগ নেই বলেই চূড়ান্তভাবে মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ৩ মাস আন্দোলনের পর ১২ বছরের ব্যর্থতা ঢেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ফিরতে বলা হলে আমরা সেই অনুরোধ রাখতে পারছি না।’
তবে শিক্ষার্থীরা জানান, সার্কিট হাউজের বৈঠকে পূর্ব থেকে তাদের অংশগ্রহণ আহ্বান করা হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে শিক্ষামন্ত্রীর চট্টগ্রাম আসার খবর পেয়ে সকালে শিক্ষামন্ত্রীর অংশ নেওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরে দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ছুটে যান। সেখানে প্রবেশের পূর্বে তাদের মুঠোফোন নিয়ে নেওয়া হলেও বৈঠক শেষে পুনরায় সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের তো ইচ্ছাই ছিলো ক্লাস করার। শিক্ষকেরা সবসময় ক্লাস করে যাচ্ছিলেন। আন্দোলনকারীরা এটা বন্ধ করেছিল। আমরা তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম, সেখানে ওরা আমাদের হেনস্থা করেছিল। পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিশনার, শিক্ষা উপমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছি। এখন যেহেতু শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা সেটা মান্য করতে বাধ্য। আগামীকাল (আজ রোববার) আমরা অবশ্যই ক্লাসে ফিরে যাবো।’