দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো বিভাগ-বিভাজন থাকছে না

৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির বই কমছে ২৫টি

নিজাম সিদ্দিকী »

আগামী বছর (২০২৪ সাল) নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণি থেকে আর কোনো বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) বিভাজন থাকছে না। দেশে প্রথমবারের মতো এ শিক্ষা কার্যক্রম চালুর ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতায় পাঠদান চলবে, কোনো ধরনের বিভাজন আর কার্যকর হবে না।

ফলে বিভাগভিত্তিক কোনো বিন্যাস না থাকায় নতুন শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যাও কমে যাবে। তাই আগামী বছর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫টি করে বই কম ছাপছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘আগামী বছর থেকে আমরা আর বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগ রাখছি না। শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত একই ধরনের বিষয়ে পড়বে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই প্রথমবারের মতো এ নতুন শিক্ষাপদ্ধতি চালু হচ্ছে।’

বই কমার বিষয়ে এনসিটিবি চেয়াম্যান বলেন, আগে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বই ছিল ১৮টি করে। আর এখন নতুন শিক্ষা কার্যক্রম (ইউনি ট্র্যাক পদ্ধতি) অনুযায়ী এসব শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা হবে ১০টি করে। অর্থাৎ আটটি করে বই কমছে। আবার নবম ও দশম শ্রেণির বই ছিল ২৭টি করে। এখন সেখানে বইয়ের সংখ্যা হবে ১০টি। ফলে ১৭টি করে বই কমে যাচ্ছে।’

আগামী বছরে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যে প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম।

এনসিটিবি-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধরা হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হচ্ছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি।

অন্যদিকে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ধরা হয়েছিল চার কোটি ১৫ লাখ ৩৮১ জন। ছাপা হয়েছিল ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯২৩ কপি পাঠ্যবই। হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পৌনে তিন কোটি বই কম ছাপা হচ্ছে।

এনসিটিবে সূত্রে জানা গেছে, দিনরাত সমানতালে চলছে সংশ্লিষ্ট ছাপাখানায় পাঠ্যবই ছাপার কাজ। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর অন্তত দুই মাস আগে পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়ার পর নানান জটিলতায় এ কাজ পিছিয়ে যায়। ফলে অষ্টম শ্রেণি ছাড়া সব শ্রেণির বই নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ নভেম্বরের মধ্যেই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ৯৩ শতাংশ বই ছাপা শেষে উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পাঠানো হবে।
এছাড়া, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ছাপার কাজ শেষ হয়ে যাবে। ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য ছয় কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি বইয়ের মধ্যে ১ কোটি ৯২ লাখ ৩৪ হাজার ৩২৮ কপি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বা বইয়ের সরবরাহ কাজ চলমান রয়েছে।

পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে বিধিনিষেধ
জানা গেছে, এবার পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে ২২টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠ্যবই সংক্রান্ত কোনো তথ্য ও ছবি এবং পা-ুলিপি গণমাধ্যম বা কোনো সংস্থাকে না দিতে নির্দেশনা দিয়েছে এনসিটিবি। গত ১৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) এনসিটিবির সচিব মোসা. নাজমা আখতারের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের কার্যাদেশ পাওয়া সব মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী বা ব্যবস্থাপককে জানানো যাচ্ছে যে, এনসিটিবি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে (সংস্থা বা গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত) ছাপাখানায় প্রবেশ, ছবি তোলা, পাঠ্যপুস্তক কিংবা পাঠ্যপুস্তকের ফর্মা না দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে সরকার বছরের শুরুতে সারাদেশের সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিয়ে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতি বছর এ দায়িত্ব পালন করে থাকে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার (২৩ অক্টোবর) নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ২০২৪ সালে নবম শ্রেণিতে বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) বিভাজন না থাকার বিষয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে।

প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর দাপ্তরিক চিঠির মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিষয়টি অবহিত করে।

অধিদফতরের জারি করা চিঠিতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণিতে বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) বিভাজন থাকছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০২৪ সালে প্রাথমিকের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ২০২৫ সালে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম এবং মাধ্যমিকের দশম শ্রেণি নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। আর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণি ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৩ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়। এর আগে বিভিন্ন সময় শিক্ষাক্রমে সামান্য পরিমার্জন করা হয়। তবে এবার শুধু পরিমার্জন নয়, শিক্ষায় রূপান্তর আনতে পুরোপুরি পরিবর্তন আনা হচ্ছে কারিকুলামে।