থানার অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে, নিরাপত্তা দেবে কে

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে দেশীয় অস্ত্র, গুলি-কার্তুজ, খোসাসহ জিম্মিদের নির্যাতনের বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানে উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর মধ্যে পুলিশের ব্যবহৃত গুলির খোসাও পাওয়া গেছে। সোমবার মধ্যরাতে নগরের বহদ্দারহাট মাছের বাজারের একটি ভবনের তৃতীয় তলায় ওই সন্ত্রাসী আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ ও র‍্যাব-৭। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ জানায়, আস্তানা থেকে ১২টি শর্টগানের কার্তুজের খোসা ও ৯টি পিস্তলের গুলির খোসা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি গুলির খোসা রয়েছে, যা পুলিশে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া সেখান থেকে শর্টগানের দুটি তাজা কার্তুজ ও একটি গুলি জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের ওই আস্তানা একটি গোপন টর্চার সেল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এখানে মানুষকে ধরে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি উপকমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের টর্চার সেল থেকে যেসব গুলির খোসা আমরা উদ্ধার করেছি, এর মধ্যে দুটি গুলিতে বিপি (বাংলাদেশ পুলিশ) লেখা রয়েছে। আমরা ধারণা করছি, নগরীর কোনো থানা থেকে এসব গুলি লুট হয়েছিল; যা সন্ত্রাসীদের হাতে চলে আসার পর ব্যবহৃত হয়েছে।’ সন্ত্রাসীদের কাছে পুলিশের এসব গুলি কীভাবে এসেছে কিংবা আরও গুলি বা কোনো পিস্তুল আছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এ ঘটনার কিছুদিন আগে পাহাড়তলী থানার রাসমণি ঘাট এলাকা থেকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাইদুর রহমান মাসুম ওরফে ব্লেড মাসুমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে পাহাড়তলী থানা থেকে লুট হওয়া একটি সেমি অটোমেটিক পিস্তল, ৭.৬২ এমএম ক্যালিবারের চার রাউন্ড গুলি, একটি খালি ম্যাগাজিন এবং অস্ত্র বহনের প্রসেস উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার ব্লেড মাসুম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলো সন্ত্রাসীরা ছিনতাই ও ডাকাতিতে ব্যবহার করছে। অভিযানে উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পাহাড়তলী থানায় হামলা ও লুটপাটের সময় সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যায় বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশ চট্টগ্রাম শহরে দুটি অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গুলিসহ ছয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, তাঁরা ছিনতাইকারী এবং উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলি চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা থেকে লুট করেছেন। গত বছরের ২৯ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় মো. আনিছ নামের এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ পাঁচটি গুলির খোসা ও অস্ত্র বহনের একটি ব্যাগ আলামত জব্দ করে। পুলিশ জানায়, উদ্ধার করা গুলির খোসায় পুলিশ লেখা রয়েছে।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কোস্টগার্ড সদস্যরা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি পিস্তলসহ জিয়াউর রহমান নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াউর পুলিশকে বলেন, তিনি ডাকাত সরদার। এর আগে তিনি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করলেও চট্টগ্রামে পুলিশের স্থাপনা থেকে পিস্তল লুট করে আবার ডাকাতি করছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, দেশে ৬৬৪টি থানা আছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানা-ফাঁড়ি, পুলিশ বক্সসহ বিভিন্ন ইউনিট-স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। এসব স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি গোলাবারুদ লুট হয়। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড ও বিভিন্ন বোরের গুলি।
এ পরিমাণ অস্ত্র সন্ত্রাসীদের জন্য সহায়ক হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য চরম হুমকির। এসব অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সমাজে শান্তি স্থাপন সম্ভব নয়।