সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনার পর আজ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌথবাহিনী টহল অব্যাহত রেখেছে। ক্যাম্পাসে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এদিকে গতকাল দুই দফায় সংঘর্ষের পর আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে ক্যাম্পাসের বিভিন্নস্থানে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট, জিরো পয়েন্ট, সোহরাওয়ার্দী মোড়, শহীদ মিনার, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এলাকা অনেকটাই ফাঁকা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের বাহন শাটল স্বাভাবিক নিয়মেই চলাচল করছে।
ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে যৌথবাহিনি টহল দিচ্ছে। ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আশা করছি পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে।
ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গতকালের পরিস্থিতি বিবেচনায় আজ ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) ক্লাস চলবে কি না, এটি শিগগিরই জানানো হবে।’
এর আগে গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে রোবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে চবি মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, গতকাল থেকে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর গুরুতর আহত হয়েছেন ১০ জন।
আহতদের বিষয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশেরই শরীর ছিলে গেছে, কেটে গেছে এবং কারো শরীরে গভীর ক্ষতও রয়েছে। মোট কথা ছোট-বড় সবধরনের ক্ষতই রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কপাল, মাথা, শরীরে ক্ষত হয়েছে।
জানা যায়, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফসহ শিক্ষকেরা দুই পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ।
দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হাতে রড, পাইপ, কাঠের লাঠি ও পাথর এবং স্থানীয়দের হাতে রামদা, রড ও পাইপ দেখা গেছে। সংঘর্ষে ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষ একপর্যায়ে গ্রামের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী অলিগলিতে আটকে গেলে তাদের মারধর করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে। একপর্যায়ে গতকাল দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে তিন শিক্ষার্থী নগরের দুই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে একজনকে ঢাকায় রেফার্ড় করা হয়েছে।