জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারামারি-হানাহানি, পোস্টার ছেঁড়াসহ নির্বাচনী সংঘাতের খবর আসলেও এসবের ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনটিতে। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত একক প্রার্থী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। তার বিপরীতে আসনটিতে নেই কোনো দলীয় প্রার্থী বা শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী। এখনো পর্যন্ত আসনটিতে কোনো নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। ঘটেনি ব্যানার-পোস্টার ছেঁড়ার মতো ছোটখাট ঘটনাও।
এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুর রব চৌধুরী টিপু (লাঙল), তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী মকবুল আহমদ চৌধুরী সাদাদ (সোনালী আঁশ পাট), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী আবুল হোসেন (মোমবাতি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী স ম হামেদ হোসাইন (চেয়ার), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আরিফ (একতারা) ও খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মৌলভী রশিদুল হক (বটগাছ)। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নৌকা, সোনালী আঁশ (পাট) ও চেয়ার প্রতীকে প্রার্থীদের কিছু প্রচারণা দেখা গেলেও অন্যদের প্রচার-প্রচারণা এখানো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
ভোটাররা জানান, এই আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত। তবে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই হলে ভালো হতো।
মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (২১) জানান, এর আগে সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু এবার সুযোগ হওয়ার পরও ভোট দেয়ার আগ্রহ নেই। কারণ আমি ভোট দেওয়া না দেওয়াতে কিছু আসে যায় না, কারণ এ আসনে নৌকার প্রার্থীর জয়ী হবেন- এটা নিশ্চিত বলা যায়।
এ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুর রব চৌধুরী টিপু (লাঙল) জানান, আমি সবার দুয়াওে দুয়ারে যাচ্ছি, প্রতিটা বাজারে গিয়ে পথসভা করতেছি। মানুষের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। সকলের চাওয়া একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে প্রার্থী জয়ী হবে আমরা তাকে মেনে নেব।
তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী মকবুল আহমদ চৌধুরী সাদাদ (সোনালী আঁশ), জানান, ভোটারেরা নির্বাচন নিয়ে প্রচুর আগ্রহ দেখাচ্ছে তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়টি তাদের বিশ্বাস করানোটা কষ্ট হচ্ছে। তবুও আমরা ভোটারদের আশ্বস্ত করছি। আমার নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের ‘ডোর টু ডোর’ নক করার টেকনিকটি বেছে নিয়েছি।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী স ম হামেদ হোসাইন (চেয়ার) বলেন, হাউজ ক্যাম্পিং, পথসভা করছি আমরা। মানুষ যদি নির্বাচনের উপর আস্থা রেখে ভোটকেন্দ্রে যায় তাহলে জয়ের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আমাদের বার বার আশ্বস্ত করছেন এখন ভোটের দিন দেখা যাবে কতটা সুষ্ঠু হয়।
নির্বাচনের প্রতি মানুষের আগ্রহ নেই এমনটি মন্তব্য করে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী আবুল হোসেন (মোমবাতি) বলেন, মানুষ এখনো সন্দেহ, ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে কি-না, ভোট দিতে পারবে কি-না। তবুও আমরা প্রচারণার অংশ হিসেবে গণসংযোগ করছি। আমার বিশ্বাস বেশিরভাগ মানুষ কেন্দ্রে গেলে আমাদের ভোট দেবে কারণ এলাকার মানুষের সঙ্গে আমাদের একটা হৃদ্যতার সম্পর্ক আছে।
অন্য দুই প্রার্থী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আরিফ (একতারা) ও খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মৌলভী রশিদুল হক (বটগাছ) কে ফোন করা হলে তাদেও মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে অবিরাম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (নৌকা)। তিনি প্রতিদিন সভা-সমাবেশে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলছেন, মানুষ নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আশা করি সুন্দর একটা নির্বাচন হবে। আমি সকলকে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে আমাকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি সুখে দুঃখে সবসময় আপনাদের পাশে ছিলাম আশা করি আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও ভূমিমন্ত্রীর একান্ত সচিব রিদুয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম বলেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দেখে মানুষ নৌকায় ভোট দেবেন। আমরা মানুষের সাড়া পাচ্ছি। মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে তাই এখানে জোর করে বা কেন্দ্র দখল করে ভোট নেওয়ার সুযোগ নেই।
আনোয়ারা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৬৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ২৪৩ জন, নারী ভোটার ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৬২১ জন। এই আসনে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১১৮টি, যার মধ্যে আনোয়ারায় ৭২টি এবং কর্ণফুলীতে ৪৬টি।
উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে মাঠে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে, কেন্দ্র দখলের অভিযোগ আসলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রার্থীদের নির্বাচনী আইন মেনে প্রচার-প্রচারণা চালাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।